শ্রী আবহে বিষাদ লিখন
১
কাকভোরে রক্তকরবী তুলে এনেছে কিশোর
আর সুধা এসেছিল। সুধা দিদি।
চাঁপা ফুল রেখে ফিরে গেছে।
ফিরে গেছেন ঈশ্বর আলোকলতা বনে।
ঘুম ভেঙে গেলে
মনে পড়ে ভোর রাতে এসেছে মাধব।
রক্তাভ পায়ের পাতায়
সূত্র রেখে গেছে
মালিনী নদীর।
মনে পরে ঈশ্বর
সেসব তারিখ?
বড়ো মনে পড়ে—
কিশোর, সুধা দিদি…
পায়ের পাতা চিরে গেলে
তোমাকে মনে পড়ে
প্রেয়সী মাধব।
২
উড়ে বসছে রানী প্রজাপতি।
মড়কের দিন গেলে, এল শস্য ঋতু।
এল তুলসী লিখন পদ্ধতী, বায়ুবনে।
সখী শাপলা ফুল রেখে গ্যাছো।
তোমাকে বলেছি কতবার,
দৈবদৃশ্য পেতে, মুদ্রা লাগে।
লাগে উর্ধাঙ্গে মাটির প্রলেপ।
শতদল জলজ উপায়।
আজ তবে অন্য কোন রঙে
ফোটে শ্রীমধুর ভালোবাসা?
জলের আদর?
জল-তুলসী দিন!
ভেসে ওঠে বিকেলের গাঢ় প্রতিমা।
জলে ভাসে কাঠামো-কঙ্কাল। ভাসে
আদি গুল্ম-লতা প্রেম।
দ্যাখো, ঝংকার পেয়ে উড়ে বসছে
রানীপ্রজাপতি। উড়ে বসছে পুঁতি-পত্রে।
ঘুঙুরে ও জলে।
জলে ভাসা কবেকার
প্রেমের কঙ্কালে…
৩
ঘন ঘন উড়ে বসছে
বৈষ্ণব মুদ্রা। প্রকাশ্যে নদীর নাম
বলেনিতো কেউ।
তবুও, জলজ উপায় ভেসে এসেছে
স্নেহ পাখি। চৈতন্য দিন।
দীর্ঘ কায়া আর বনরোদ্দুর।
মন, মনের তো জ্বলে জয়তিলক।
আঁখি ঢেউ গুনে নিচ্ছেতো
প্রতিদিন। জন্মকাল প্রেম।
প্রেম ও প্রেমের মুদ্রা।
ভালোবাসা উড়ে আসে,
ভাসে কত কত জলজ উপায়।
তবু, এখনো নদীর নাম
জানা হল না তো!
৪
গঙ্গাতলার জলে ধুয়ে যায়
লক্ষীস্তনা খর। খর ও খরের অক্ষর।
আদি বিধাতার গ্রীবা।
এই কী অন্যমনা মিথ?
আতর ফেনার মতো সিঁড়ি দিয়ে
নেমে আসা জল। জল ও জলের বৈরাগ।
গোয়াল কুপীর আলো জ্বালো।
জ্বালো, সান্ধ্য গাভীমুখ। দূরের পূন্যতীর্থ জ্বলে—
জাগো, মেঘের শ্মশান।
মানত ঘোড়ার পিঠে শুয়ে, কবে
গিয়েছিলে দ্বিকবিজয়? ঘুমে?
মনে নেই, টেরাকোটা ঠাকুরের থান!
ঠান্ডা মেঝের পরে ঝরে থাকা জুঁই!
কদম-পরাগ-রতি, গন্ধ গোধূলীর আলো আর
বিন্দু বিন্দু জল…
মনে পরে, বাসি তিল ও দানের তুলসী কথা!
মনে পরে, গঙ্গাতলার জলে ভেসে যাওয়া ডোঙা!
ভাঙা লক্ষীস্তন মনে পরে!
আর মনে পরে, গোটা গোটা ধুপের অক্ষর!
চালের পিন্ড খুঁটে খেলে, অগ্রদানী কাকে!
৫
নিশ্চিত পুকুরের জলে
ভেসে আসে ভক্তি কাপাশ ফুল।
দেবজ্ঞানে আলো।
রচি লীলা-কনিষ্ঠে। পদ্মশ্লোকে—
ডাকে, গাস্পেল।
চল, রচি ব্রজ। ব্রজের কামনা।
মূর্ত জীব। হাওয়া-তারে বসে
তার পাখি ও পদ্ধতিটি। কাঁচা হ্রদ।
আবাদ ফুসফুস।
গন্ধর্ব, তুমি ও তন্ডুল রাখো নীচে।
পুরনো পাতার ভ্রুণে দোলে
ষষ্ঠ ঋতু। আবহ?
—বিষাদ
নববধূমাতা। ভ্রমরতত্ব।
গোপন মৌতাত।
এই যে সাঁতার দিচ্ছি, ঝড়াপাতাজল—
এও কি অমর? ভেসে যায় কালীবক্ষ-প্রেত।
অচলপত্র। বলীরক্ত স্রোতা, ভোর।
একডুবে তুলে আনছি জল।
তুমি বলছ, ‘মায়া’। আমি বলছি,
নক্ষত্রলিপি, এই বেলা ধরো
শেষের পঙক্তিটি,
ফুটে ওঠা জবা আর গর্ভকেশর।
Leave a reply