Selected static block was removed or unpublished
Track Order
0 0
0 My Wishlist

No products in the wishlist.

View Wishlist

0 ₹0.00 0
0 Shopping Cart
Shopping cart (0)
Subtotal: ₹0.00

View cartCheckout

বিভাগ
Array
Array
Log in / Sign up
My Account

Lost password?

Facebook Instagram LinkdIn Tumblr Telegram
0 0
0 My Wishlist

No products in the wishlist.

View Wishlist

0 ₹0.00 0
0 Shopping Cart
Shopping cart (0)
Subtotal: ₹0.00

View cartCheckout

Menu Categories
Array
  • লাইফ peg
    • রান্না
    • কবিতা সংকলন
  • ফ্যাক্সিমিলি সংস্করণ
  • সাক্ষাৎকার
  • Prebook
  • স্মারক আলেখ্য
  • New Arrivals
  • ছোটগল্প ও রম্যরচনা
  • Best Seller
  • উপন্যাস
  • আলোপৃথিবী
  • নাটক ও সিনেমা
  • ডায়েরি ও জার্নাল
  • কবিতা
    • নির্বাচিত কবিতা
  • চিঠিপত্র
  • কবিতা সংগ্রহ
  • উজ্জ্বল উদ্ধার
  • Art Monograph
  • অনুবাদ
  • পত্রিকা
  • Film Script Translation
  • গদ্য ও প্রবন্ধ
  • কথকতা
  • Recipe Collection
  • সম্পাদনা
Wishlist 0
Log in / Sign up
Facebook Instagram LinkdIn Tumblr Telegram

পার্থজিৎ চন্দ 

August 16, 2022 /Posted byaloprithibi / 0

হারানো হিয়ার কুঞ্জ

‘অচেতন মনো-মাঝে তখন রিমিঝিমি ধ্বনি বাজে’

 

‘সময় মুছিয়া ফেলে সব এসে

সময়ের হাত

সৌন্দর্যেরে করে না আঘাত

মানুষের মনে

যে সৌন্দর্য জন্ম লয়- শুকনো পাতার মতো ঝরে নাকো বনে

ঝরে নাকো বনে

নক্ষত্রও নিবে যায়- মুছে যায় পৃথিবীর পুরাতন পথ

শেষ হয়- কমলার ফুল, বন, বনের পর্বত

মানুষের মনে

সে সৌন্দর্য জন্ম লয় লয় শুকনো পাতার মতো ঝরে নাকো বনে

ঝরে নাকো বনে’। (সময় মুছিয়া ফেলে সব এসে)

 

সেদিন বসেছিলাম, রবীন্দ্রনাথের গানের পাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছিল জীবনানন্দ দাশের কবিতাটি। পৃথিবীর সব সংযোগের মধ্য কারণ আজও আবিষ্কৃত হয়নি; নিশ্চয় কোনও প্রজাপতি-প্রভাব রয়েছে। একদিন হয়তো আবিষ্কৃত হবে শ্রাবণের দুপুরে রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দের কাছাকাছি চলে আসাটি। 

জীবনানন্দের এ কবিতাটি বহুল পঠিত, ‘অগ্রন্থিত’ যে কবিতাগুলি তাঁর সব থেকে বেশি পঠিত তার মধ্যে এটি একদম উপরের দিকে থাকবে। কবিতাটির পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠবার একাধিক কারণ রয়েছে। কবিতাটির মধ্যে খুব শান্ত স্বরে বিবৃতি রয়েছে; ‘জটিল’ অনুসঙ্গ নেই তেমন। সন্ত্রাস নেই প্রকাশ্য। 

কিন্তু সত্যিই কি কবিতাটি আপাতভাবে যতটা সহজ মনে হয় ততটা সহজ? কবিতাটির শরীরে হয়তো সে প্রশ্নটি প্রথম-মাত্রায় লুকিয়ে নেই; কিন্তু বারবার পড়লে একটি প্রশ্ন তৈরি হবেই- সৌন্দর্য কী? মানুষের মনে যা জন্ম নেয় তা যে ‘সুন্দর’ তাকেই বা নির্ধারণ করা যাচ্ছে কীভাবে? ‘বস্তু’ সুন্দর, এ কথাটি মেনে নেবার মধ্যে বিপদের সমূহ সম্ভাবনা আছে। বস্তু থেকে উৎসারিত ঠিক কী মানুষের মনের মধ্যে প্রবেশ করে ‘সৌন্দর্য’ সৃষ্টি করে তা স্নায়ু-নন্দনতত্ত্বের অত্যন্ত জটিল বিষয়। এবং ঠিক কী কারণে জীবনানন্দের এ কবিতাটি ‘প্রকাশ্য’ কোনও সন্ত্রাস না-থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিমানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠল তাও আশ্চর্যের বিষয়। 

জীবনানন্দের কবিতাটিতে সময়ের একটি মাত্র ‘অক্ষমতা’র কথা রয়েছে, সৌন্দর্য তার ধরাছোঁয়ার বাইরে। কবিতাটি যে তিনটি বিষয় নিয়ে আবর্তিত হয়ে চলেছে সেগুলি হল ‘সময়’, ‘সৌন্দর্য’ ও ‘মানুষের মন’। এর মধ্যে যে ধারণাটি আমাদের কাছে ‘ফ্লো’ হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে তা হল ‘সময়’। এবার আসা যাক আরেকটু জটিলতর প্রসঙ্গে- সময় সব মুছে ফেলে, এ কথাটিকে মান্যতা দিলে আরেকটি বিষয় আমাদের মনে উঁকি দেবেই। সৌন্দর্য কি সময়-ধারণা শুরুর আগে থেকেই বিদ্যমান? না কি আমাদের সময়-ধারণার সঙ্গে সঙ্গে’ই শুরু হয়েছিল সৌন্দর্য-ধারণা? সৌন্দর্য কি সময়-ধারণার অতিরিক্ত কিছু, অথবা সৌন্দর্য কি সময়ের হাতে সব কিছু বিনষ্ট হয়ে যাবার পর যা পড়ে থাকে তাই? 

চতুর্থ লাইনে এসে আরেকটি বিমূর্ত ধারণার কাছে আমাদের নিয়ে আসেন জীবনানন্দ- সেটি হল মানুষের মন। মানুষের মন, কনসাসনেস দেহ-অতিরিক্ত বিষয় কি না সে নিয়ে গূঢ় দার্শনিক প্রশ্ন বিদ্যমান। জীবনানন্দের কবিতাটি বারবার পড়ে সৌন্দর্যকে দেহ-অতিরিক্ত বিষয় বলে মনে হলেও হতে পারে কারও কারও; মন নিয়ে কোনও স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভবপর নয়।

সপ্তম লাইনে এসে কবি প্রকাণ্ড এক উলম্ফন দিয়েছেন, তিনি জাগতিক সময়ের সীমা ছাড়িয়ে চলে গেছেন মহাজাগতিক সময়ের কাছে। ‘নক্ষত্রও নিবে যায়’- জীবনানন্দ যেন মহা-সংকোচনের পথ বেয়ে ব্রহ্মাণ্ডের অন্তিম মুহূর্তে পৌঁছে গিয়েছেন। এর পরের লাইনটি আরও মারাত্মক, সেখানে আপাত-শান্ত ‘কমলার ফুল’ ‘বন’ ইত্যাদির পর তিনি লিখলেন ‘বনের পর্বত’। 

লক্ষ করার, তিনি পর্বতের বন লিখলেন না, আমরা বহুবার পড়বার সময়ে খেয়াল করব না; কিন্তু একদিন আবিষ্কার করব ‘বনের পর্বত’। 

শেষ দুটি লাইনে ধুয়ার মতো ফিরে আসে আবার সেই বোধের অর্জন, ‘যে সৌন্দর্য জন্ম লয় শুকনো পাতার মতো ঝরে নাকো বনে / ঝরে নাকো বনে’। 

জীবনানন্দ দাশের এ কবিতাটির পাশাপাশি এক শ্রাবণের দুপুরে ঘুরতে শুরু করেছিল রবীন্দ্রনাথের সেই গানটি, ‘স্বপ্নে আমার মনে হল কখন ঘা দিলে আমার দ্বারে, হায়’। বহুশ্রুত গান, এ গানটিতেও আপাতভাবে তেমন কোনও প্রকাশ্য সন্ত্রাস নেই। কিন্তু একবার গানটির রহস্য ভর করতে শুরু করলে তার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া কঠিন। 

মানুষের জাগরণ ও ঘুমের মাঝখানে খেলা করতে থাকা স্বপ্ন বিষয়টি চির-কুহকের। একমাত্র স্বপ্নের ভেতরই মানুষ জেগে উঠে জাগরণকে অস্বীকার করতে পারে। 

স্বপ্নের মধ্যে এই জেগে ওঠা কি মানুষের দ্বিতীয়-জন্ম?

এ গানটিতে তার থেকেও জটিলতর সব প্রশ্ন খেলা করে যায়। 

যে মানুষ স্বপ্নে মনে হওয়ার বিষয়টি ‘এক্সপেরিয়ান্স’ করছেন তিনি কনসাস, শুধু তাই নয়- তিনি পরে সেটিকে ‘স্মরণ’ করবার মতো সচেতন। 

কিন্তু পরমুহূর্তেই তিনি এই সচেতনতাকে ভেঙে দিচ্ছেন, তিনি যেন কিছুটা সচেতনভাবেই ঘোষণা করছেন, ‘আমি জাগি নাই জাগি নাই গো’। এই ‘জাগি নাই গো’- তিনটি শব্দের সঙ্গে শুরু হচ্ছে আরেকটি স্তর। স্বপ্নে মনে হওয়া ও না-জাগার মধ্যে যে প্রকাশ্য ‘কন্ট্রাডিকশন’ সেটিকে এক লহমায় উড়িয়ে দিয়ে গেলেন রবীন্দ্রনাথ। ‘আমি’ যে একই সঙ্গে স্বপ্নে জেগে উঠতে পারে ও ঘোষণা করতে পারে সে জাগেনি তা এই গানের সামনে দাঁড়িয়ে ‘বিশ্বাস’ না-করা ছাড়া উপায় নেই। 

রবীন্দ্রনাথের গানে ‘তুমি’র উপস্থিতি অমোঘ, এখানেও সে তুমি রয়েছেন। তিনি মিলিয়ে যাচ্ছেন অন্ধকারে… এই লাইনটি নিয়েও সমস্যা নেই। লাইনটি গূঢ় ইশারাপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন সেটিকে প্রথম দুটি লাইনের প্রেক্ষিতে দেখা শুরু হয়। তিনি যে অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছেন সেটা অনুধাবন করার মতো কনসাস একটি মানুষ আগের লাইনেই ঘোষণা করেছেন না-জাগার কথা। 

পরের লাইনটি আরও ঘোর-লাগা, আমরা পাচ্ছি, ‘অচেতন মনো-মাঝে তখন রিমিঝিমি ধ্বনি বাজে’। সচেতন-অবচেতন-অচেতনের যে পরিচিত সীমা তা দিয়ে লাইনটিকে বিশ্লেষণ করা যাবে না কোনও দিন। কারণ অচেতন মনের খেলা সচেতনভাবে অনুধাবন করা সম্ভবপর নয়। সম্ভবপর হলে সেটি অচেতনতার শর্তটিকেই লঙ্ঘন করে। 

ষষ্ঠ লাইনে আবার ফিরে এসেছে না-জাগার কথা, ‘আমি জাগি নাই নাগি নাই গো, নদী বহিল বনের পারে’। 

শিল্পের মধ্যে ঘনিয়ে থাকা কন্ট্রাডিকশন’ই তাকে রহস্যময় করে তোলে, সেটিই আমাদের নিয়ে যায় এমন এক পবিত্র সম্পর্কের কাছাকাছি যা বাস্তবতার থেকেও বেশি বাস্তব। রবীন্দ্রনাথের গানের সব থেকে বড় শক্তি ও আকর্ষণ সম্ভবত সে কারণেই। 

ঘরে যে পথিক এসেছিল সে সম্পর্কেও না-জাগা সত্তা নিশ্চিত, এমনকি তাঁর আসার ক্ষণটিও জানা। সেটি দুই-প্রহর। রাত্রি দ্বিপ্রহরে কোনও পথিক এসেছিল, কোথাও যেন গানটির কাছে থাকতে থাকতে মনে হয়, এ পথিকের জন্য অপেক্ষাও ছিল ঘুমন্তের। বীনা বেজেছিল, ওই যে ‘বেজেছিল কি জানি না’ বলা হয়েছে তা আসলে ‘বাজা’টিকেই আরও মাণ্যতা দেয়। 

শেষের আগের লাইনে পৃথিবীর শুদ্ধতম হাহাকারের শরীর ধরে ফুটে উঠেছে পাঁচটি শব্দ, ‘জাগি নাই জাগি নাই গো’। এবং শেষ লাইনে এসে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, ‘ঘিরেছিল বনগন্ধ ঘুমের চারি ধারে’।

গানটি শেষ করে অদ্ভুত অনুভূতি হয়, এখানে এমন এক ‘এক্সপেরিয়েন্সার’ অবস্থান করছেন যিনি জাগ্রতের থেকেও বেশি জাগ্রত। আবার অন্যদিকে তাঁর ‘অচেতন’ অবস্থা মেনে না-নিলে গানটির সৃষ্টির পথ ও যুক্তিকাঠামো দুর্বল হয়ে আসে। আমাদের প্রতারক যুক্তিকাঠামোর বাইরে অবস্থান করা, অবাস্তব, যুক্তিহীন কাঠামোটি ভয়ংকরভাবে ‘সত্যি’ হয়ে ওঠে অবাস্তবতাকে আশ্রয় করেই। 

উত্তর পাওয়া যাবে না, সবকিছুর উত্তর খোঁজা ও পাওয়া শিল্পের কাজ নয়… সে যে নিজের নিয়মে উত্তরহীন থেকেই উত্তর দিয়ে যাবে তাও জানা। ঘুমের মধ্যে, অচেতন মন কীভাবে গন্ধের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় তা আমাদের বাস্তবতার অজানা; কিন্তু শিল্পের এ ‘অবাস্তবতা’ হয়তো অন্য কোনও বাস্তবতার ছায়া। সেটি শিল্পের উঠোনে আমাদের বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে ওঠা সত্য। 

আমাদের মনন, চৈতন্য কি সমস্ত ক্যাওসের মধ্যে ‘অর্ডার’ ও অর্থসন্ধান করে চলে? আসলে শিল্প কি এই রহস্যসন্ধান প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নির্মিত হয়ে চলেছে? তা হলে কি শিল্প-সৌন্দর্য আসলে এক প্রনোদনা, যার ভেতর অবস্থান করে আমাদের বিচিত্র তৃপ্তি জন্মায়? 

শিল্প বা সৌন্দর্য-ধারণার মূলে হয়তো মানুষের মননের এই বিচিত্র ধারা কাজ করে যায়; শিল্পের অস্পষ্টতা আমাদের তৃপ্তি দেয় আসলে সে কারণেই যে কারণ আমাদের চালিত করে সেই অস্পষ্টতার ভেতর থেকে অর্থ খুঁজে আনতে। অর্ডার সন্ধান করতে। আমাদের স্নায়ুর ভেতর, আমাদের বোধের ভেতর হয়তো লক্ষ লক্ষ বছর ধরে নির্মিত হয়ে চলেছে রিচার্ড গ্রেগরি’র ‘ডালমেশিয়ান কুকুর’। সে অস্পষ্ট-কুকুরের দিকে অপলক চেয়ে থেকে তাকে স্পষ্টতর করে তোলার তীব্র ইচ্ছাই আমাদের শিল্পবোধের মূলে অবস্থান করছে। শিল্পের কন্ট্রাস্ট যে আমাদের টেনে নিয়ে যায় রহস্যকুয়াশার দিকে তার কারণও অনেকটা স্পষ্ট হয়ে আসে এভাবে ভাবলে।

রবীন্দ্রনাথের আরেকটি গানের কাছে গিয়ে বসেছিলাম, অতি-পরিচিত গান, ‘কাঁদালে তুমি মোরে ভালোবাসারই ঘায়ে- / নিবিড় বেদনাতে পুলক লাগে গায়ে’। শৈলজানন্দ একটি অনুষ্ঠানে এ গানটি একটি মেয়েকে দিয়ে গাইয়েছিলেন। ‘অশ্লীল’ গানটি এক মেয়ের কণ্ঠে গীত হয়েছে শুনে প্রবল সমালোচনা ধেয়ে এসেছিল শৈলজানন্দের দিকে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ আতঙ্কিত হয়ে বলেছিলেন সমালোচক’রা যে শৈলজানন্দের গলা কেটে নেয়নি এটাই অনেক। 

মানুষের চৈতন্য ও বোধের সু-উচ্চ শৃঙ্গ’টিই তাকে প্রকৃত প্রেমের পথের পথিক করে তোলে। নতুন মহাদেশ আবিষ্কারের মতো সে তার প্রেমের মধ্যে খুঁজে পায় নতুন নতুন ঝরনা। সৃষ্টির সব থেকে বড় রহস্য সম্ভবত মানুষের বিমর্ষ হবার অপার ক্ষমতা। এ ক্ষমতার প্রকাশ ছাড়া মানুষের শিল্পের সব থেকে বড় অংশ সার্থক হত না। এ গানটিতেও সে অকারণ বিমর্ষ হবার উদযাপন। 

গানটির প্রথম লাইনেই লেখা হয়ে যাচ্ছে ‘অকারণ’ অশ্রুপাতের কারণ, ভালোবাসার ঘায়ে নিজের অশ্রুপাতের দিকে তাকিয়ে বিহ্বল হয়ে রয়েছে এক মানুষ। এ যেন নিজের প্রসবকাতরতার দিকে নিজেই তাকিয়ে থাকা। 

বেদনার পথ বেয়ে পুলক এসেছে, এখানে মেনে নেওয়া ভাল এবং অনিবার্য যে এ পুলক অতি-উচ্চ, পবিত্র এক অনুভূতি। প্রথম দুটি লাইনে যেন কিছুটা শক্তি অর্জন করার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন শব্দগুলি উচ্চারণ করা ব্যক্তি, তৃতীয় লাইনে এসে তাঁর সমস্ত দ্বিধা ঘুচে গেছে, সে এখন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে পারে, ‘তোমার অভিসারে যাব অগম-পারে’। সে দুর্গমের দিকে যাত্রাপথে ব্যথা বাজবে পায়ে। এ ব্যথাই হবে পথের সম্বল। মানুষের বিমর্ষ ও ‘অকারণে’ দুঃখিত হবার ক্ষমতার আরেকবার প্রমাণ পাওয়া যায় পঞ্চম ও ষষ্ঠ-লাইনে এসে, রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, ‘পরানে বাজে বাঁশি, নয়নে বহে ধারা- / দুখের মাধুরীতে করিল দিশাহারা’। প্রেম সন্ধান দেয় সে বিষণ্ণ-দেবতার, মানুষ পতঙ্গের মতো তার কাছে ছুটে যায় ক্ষতবিক্ষত হবে বলে। 

মানুষ যে কারণে শিল্পের কাছে যায় ঠিক সে কারণেই হয়তো প্রেমের কাছেও ছুটে যায়। 

এবং যায় বলেই সে উচ্চারণ করতে পারে, ‘সকলই নিবে কেড়ে, দিবে না তবু ছেড়ে-/ মন সরে না যতে, ফেলিলে একি দায়ে’। 

এ গানটির সামনে বসে সেদিন বিচিত্র অনুভূতি হল, হঠাৎ এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল প্রেম শুরু হয় আর পাঁচটা পাহাড়ি পথের ধারা মেনে। প্রথমে সামান্য চড়াই-উৎরাই, গাছ ও মেঘের আড়াল। একটা সময় পর সন্ধান পাওয়া যায় এ পথ একদিন শেষ হয়ে যাবে, পড়ে থাকবে পাথর-বরফ-পথের ইশারা। নিজেকে আবিষ্কার করতে করতে পাথর ভেঙে চলা।

সমস্ত প্রেম-ই একটা স্তরের পর নিজেকে আবিষ্কারের দিকে ঝুঁকে পড়ে, গৌণ হয়ে আসে প্রেমিক বা প্রেমিকার বাহ্যিক অস্তিত্ব। দুখের মাধুরী সন্ধান করাই তখন হয়ে ওঠে আনন্দঝরনা। 

গানটির শেষ লাইনে আরেকটি মারাত্মক ইঙ্গিত রেখে দিলেন রবীন্দ্রনাথ, লিখলেন, ‘মন সরে না যেতে, ফেলিলে একি দায়ে’। এর আগে বহুবার শোনার সময় ‘মন সরে না যেতে’ অংশটিকে পৃথক করে খেয়াল করিনি, আজ করলাম। তা হলে কি মানুষ তার প্রেমের একটি পর্যায় মন সরিয়ে নেবার কথা ভাবে? সে কি বুঝতে পারে তারদিকে এগিয়ে আসছে অক্টোপাস, ভালোবাসার অক্টোপাস? 

কিন্তু সে কি প্রকৃতই মন সরিয়ে নিতে চায়? না কি এও এক খেলা ও দেয়ালা? যে দায়ের কথা গানে উল্লেখিত তা হয়তো অনেকটাই স্বেচ্ছায় বরণ করে নেওয়া। এই বরণ করে নেওয়ার মধ্যে ভালোবাসার আনন্দ ও প্রাপ্তি। 

আগের গানটিতে অভিসারে অগম-পারে যাবার কথা বলেছিলেন কবি, এই অগম-পারের কথা রবীন্দ্রনাথ বসিয়ে ছিলেন বিশুপাগলের মুখেও, বিশুপাগল নন্দিনীকে বলেছিল, ‘তুমি আমার সমুদ্রের অগম পারের দূতী। যেদিন এলে যক্ষপুরীতে, আমার হৃদয়ে লোনা জলের হাওয়ায় এসে ধাক্কা দিলে।’ এ কথা বলবার ঠিক আগের মুহূর্তে বিশুপাগলের গেয়ে ওঠা গানটি ছিল, ‘তোমার গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখ / ওগো ঘুমভাঙানিয়া’। শিল্পের ক্ষেত্রে কন্ট্রাস্ট যে কোন পথ বেয়ে আমাদের কাছে বৃহৎ ও মহতের সন্ধান নিয়ে আসে তা কল্পনাতীত। যেমন এখানেও সে ঘটানাটি নীরবে ঘটে গেল, রবীন্দ্রনাথ যাঁকে ঘুমভাঙানিয়া হিসাবে চিহ্নিত করছেন তিনি যে কী বিচিত্র রূপে আবির্ভূত হবে গানটির শেষে, তার জন্য আমাদের মৃদু অপেক্ষা জরুরি। 

শুধু এবার দেখে নেওয়া যাক, গানটির চতুর্থ লাইনে এসে ঘুমভাঙানিয়া অবলীলায় রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে দুখজাগানিয়া’য়। লক্ষ করার, গানটির প্রথম লাইনে ঘুমভাঙানিয়া’কে গান শোনাবার কথা বলা হয়েছে। গান শোনাবে এক ‘আমি’; এ গান শোনাবার মধ্যে নিশ্চয় আনন্দের প্রবাহ থাকবে। কিন্তু সে আনন্দ আসলে ‘বেদনা’র; সে বেদনার পথ বেয়েই ঘুমিভাঙানিয়া হয়ে উঠেছে দুখজাগানিয়া’য়। 

আঁধার ঘিরে আসা, পাখির নীড়ে ফিরে আসা, তরীর তীরে ফিরে আসা- সবকিছুই বাহ্যিক ঘটনাপ্রবাহ। একে একে সব ঘটে যাচ্ছে, শুধু বিরাম পাচ্ছে না সে আমি’র ‘হিয়া’। অবাক করে দেওয়া এটিও যে গানটিতে ঘুমভাঙানিয়া শব্দটি একবার ব্যবহৃত হয়েছে; দুখজাগানিয়ে শব্দটি তিনবার। 

শুধু তাই নয়, জীবনের সব কাজের মাঝখানে সে দুলিয়ে চলেছে হাসিকান্নার দোলা, সে নিজেই হয়ে উঠছে হাসিকান্নার কারণ ও কারণের পরিসমাপ্তি। 

রবীন্দ্রনাথ শুধু এখানেই থেমে থাকছেন না, তিনি বলছেন, ‘আমায় পরশ করে প্রাণ সুধায় ভ’রে / তুমি যাও যে সরে- ’। আড়ালের এ আবরণ মহার্ঘ। ব্যথার আড়ালে দুখজাগানিয়ার দাঁড়িয়ে থাকাও একই রকম মহার্ঘ। মানুষই সম্ভবত একমাত্র জীব যে তার দুঃখের কারণটিকে এমন যত্নে লালন করতে পারে। 

সে শুধু তাকে লালন’ই করে না, তাকে গানও শোনায়। 

কিন্তু সব শেষে প্রশ্ন জাগে, এই দুখজাগানিয়া কি মানুষের দেহ-অতিরিক্ত, এক্সটার্নাল ‘কিছু’ বা ‘কেউ’?

রবীন্দ্রনাথের গানের কাছে বসে থাকতে থাকতে এ প্রশ্নটি মুছে যেতে থাকে। যে মানুষ তার ‘দুখজাগানিয়া’কে চিহ্নিত করতে পারে, যে ঘুমের মধ্যে… স্বপ্নের মধ্যে ‘অচেতন মনো-মাঝে তখন রিমিঝিমি ধ্বনি বাজে’ আবিষ্কার করতে পারে তাঁর কাছে বাহ্যিক উপাদান ও স্টিমুলাস গৌণ এবং গৌণ। 

তাঁর সমস্ত খেলা নিজের সঙ্গে নিজের। 

এক আমি’র থেকে বৃহৎ আমি’র দিকে চলে যাওয়া ও তাকে চিনতে পারা। সে ঘুমভাঙানিয়াকে রূপান্তরিত করতে পারে দুখজাগানিয়া হিসাবে, তারপরও তাকে গান শোনাতে পারে এবং একই সঙ্গে ঘুমভাঙানিয়ার ‘আঘাতে’ জেগে না-ওঠার বেদনা নিয়ে হাহাকারে জাগরণকেও অস্বীকার করতে পারে। 

Tags: Aloprithibi Blog, Parthajit Chanda, Prose, হারানো হিয়ার কুঞ্জ
বিজয় সিংহ

About author

About Author

aloprithibi

Other posts by aloprithibi

Related posts

Read more

বিজয় সিংহ

August 16, 2022 0
সংকেত ঈশ্বর ফিরিয়েছেন প্রাচীন মনসুন কিছু ঘুম বাকি থেকে গেছে এই ভেবে স্বপ্নেরা নির্ঘুম হয় সুতরাং দুর্গের প্রাকারে পাহারায় যোগ... Continue reading
Read more

বব ডিলান | ভাষান্তর : রাজীব সিংহ

August 16, 2022 0
যুদ্ধের প্রভুরা (Master of War) এসো যুদ্ধের প্রভুরা যারা তৈরি করেছ বন্দুক গড়েছ মৃত্যু-উড়োজাহাজ বোমায় ভরেছ সিন্দুক। দেয়ালে দেয়ালে আড়ালে... Continue reading
Read more

শাম্ব

August 16, 2022 0
শ্রী আবহে বিষাদ লিখন ১ কাকভোরে রক্তকরবী তুলে এনেছে কিশোর আর সুধা এসেছিল। সুধা দিদি। চাঁপা ফুল রেখে ফিরে গেছে।... Continue reading
Read more

সমীরণ ঘোষ

July 15, 2022 0
বিজনের দাঁড়   এক ফাঁকে ফাঁকে আলো এসে হত্যার ফাঁকের বিঘত নখের কুকুরে ছেঁড়া ভ্রান্তিকর খুলির জ্যোৎস্নার বঁড়শি ছায়ার টোনা।... Continue reading
Read more

Tapabrata Mukherjee

July 15, 2022 0
The Holy Grail 1. With words at stake, or calling names As you walk by, Dignity comes in a dingy,... Continue reading

Leave a reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked

Categories

  • Aloprithibi Blog
  • Critic
  • Editorial
  • Interview
  • Japani Haiku
  • New Youngest Poet
  • Poems
  • Prose
  • Story
  • Translation
  • Uncategorized
  • World Poetry

Latest posts

পার্থজিৎ চন্দ 

August 16, 2022 0

বিজয় সিংহ

August 16, 2022 0

বব ডিলান | ভাষান্তর : রাজীব সিংহ

August 16, 2022 0

শাম্ব

August 16, 2022 0

সমীরণ ঘোষ

July 15, 2022 0

Popular Tag

Aloprithibi Aloprithibi Blog DUSTIN PICKERING English Poetry Francisco Munoz Soler Parthajit Chanda Poems Prose Spain World Poetry অনিমেষ মণ্ডল অনুবাদ অনুবাদ কবিতা অমৃতাভ দে অলোক বিশ্বাস উজ্জ্বল ঘোষ উমাপদ কর গুচ্ছকবিতা চন্দ্রদীপা সেনশর্মা চন্দ্রনাথ শেঠ তরুণ কবি ধারাবাহিক নতুন মুখ পঙ্কজ চক্রবর্তী পার্থজিৎ চন্দ পিন্টু পাল প্রবন্ধ প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী বাংলা কবিতা বিজয় সিংহ বিপাশা ভট্টাচার্য বিশ্বসাহিত্য মৌমিতা পাল রজতকান্তি সিংহচৌধুরী রুদ্র কিংশুক শাশ্বত রায় শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী শুভদীপ সেনশর্মা সমীরণ ঘোষ সম্পাদকীয় সাক্ষাৎকার সায়ন রায় সুবীর সরকার সোহম চক্রবর্তী হারানো হিয়ার কুঞ্জ
  • English
    • Arabic
    • This is just for demo

© Aloprithibi 2022 Allrights Reserved | Powered by ZeroData 

হোম
কথকতা
লাইফpeg
ব্লগ
Sign in