আমিও
অন্ধ হতেই চেয়েছিলাম শিশিরধোয়া ভোরে
যখন তোমায় দেখেছিলাম ডাকছিলে নাম ধরে
কাজল… কাজল… ননী… ও ননী…
লাফিয়ে এসে তারা
দাঁড়ায় তখন কোলটি ঘেঁষে মুখটি উঁচু তোলে
বুকের ভিতর চুপটি করে আদর খাবে বলে
আমিও তেমন হাপিত্যেশ আছি পাগলপারা।
ঘুম ভাঙাবেই
জানালার কাচ বেয়ে
ভালবাসা নেমে আসে
আমি ভিজে যাই
আকাশের মেঘে মেঘে
সজল দুচোখ ভাসে
ডুবি একেলাই
খেজুরের রস হয়ে
জ্যোৎস্না গড়িয়ে পড়ে
সেও এভাবেই
ভিতরপানেতে রয়ে
রাত্রি মধ্য যামে
ঠিক জাগাবেই
জীবনের উঠোনেতে
সময় বিছানো আছে
বসে দুজনেই
দুচোখে আঁচল পেতে
দাঁড়িয়ে মনের কাছে
এই জীবনেই
সময় গড়ায় যত
কাচের গুলির মত
দেখি আমাকেই
স্বপ্নের কাছাকাছি
এই ভাবনায় আছি
ঘুম ভাঙাবেই।
শুধু কবিতার জন্য
কোমরে ট্যানার জন্য
দুমুঠো অন্নের জন্য
মাথায় ছাদের জন্য
মাটিতে হাঁটার জন্য।
হুল্লোড় খুশির জন্য
অজানা জানার জন্য
চ্যালেঞ্জ করার জন্য
প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য।
হাওয়ায় ওড়ার জন্য
গভীর সঙ্গমের জন্য
ভালবাসার ছায়ায়
বিশ্বাসে থাকার জন্য।
নিজেকে চেনার জন্য
অন্যায়ের প্রতিবাদে
বিমুক্ত চিন্তার জন্য
সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য।
বিনম্র নিবেদন আর
অনন্ত শান্তির জন্য।।
সহযাত্রী
যাবার যদি ইচ্ছে হল যাবার কথা হোক –
দেখব কত হিসেব করে নুন খেয়েছে জোঁক।
জোঁকের মুখে নুন কিংবা ময়ূর ঠোঁটে সাপ
দুর্নীতির ওষুধ সবই সমান পরিমাপ।
চলতে গিয়ে হোঁচট খেলে লাগিও ব্যান্ড এড;
শাড়ির মত ভ্রষ্টাচারে নানা রকম শেড,
তুমিও জান, আমিও জানি, জানে সর্বজনা –
একসঙ্গে চললে তবে কাউকে বলব না।
নুনের ছিটে
১
আগামি রবিবার যেখানে যাবার কথা ছিল
সেখানে পৌঁছে গেছি এ রবিবারেই।
অনেকেই হাজির আমার মতন
অথচ কেউই কাউকে চিনতে
চাইছেন না।
২
আলোচনাসভায় দেখি
চারিদিকে জ্ঞানীগুণী লোকজন।
সকলেই নানা কথা বলে যাচ্ছে
কিন্তু কেউই কিছু শুনতে পাচ্ছে না।
শব্দগুলো কাটা ঘুড়ি যেন –
বেবাক ভেসে বেড়াচ্ছে হাওয়ায়।
নিঃশব্দে বেরিয়ে এলাম।
৩
ঘুমের মধ্যে কে যেন প্রশ্ন করে যাচ্ছে
পরপর; হতভম্ব দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি।
হঠাৎ কড়া নাড়ার শব্দ দরজায়,
ধড়মড় করে উঠে দরজা খুলি – কেউ নেই।
প্রশ্নগুলো এ সুযোগে হাওয়া হয়ে গেছে।
৪
কবিসম্মেলনে কয়েকটি
স্বরচিত কবিতা পাঠের পর
নির্বিকার শ্রোতাদের জানালাম,
এগুলি ইংরাজি কিছু কবিতার অনুবাদ।
হাততালি শেষে বললাম, মূল কবিতাগুলো যদিও
লিখে উঠতে পারিনি এখনও।
সাঁকো
সাঁকোটি বাঁশের,
সাঁকোটি নড়বড়ে,
সাঁকোটি প্রাণের,
দুপারে মিল গড়ে।
সাঁকোটি লম্বায় জুড়লে চার বাঁশ,
চওড়া এতটা দুজনে পাশ পাশ,
চাদর জড়ানো শীতের ভালবাসা
ওম গায়ে মেখে এপথে যাওয়া আসা।
ধরা থাকে ছবি খুঁটির শ্যাওলায়,
ক্যামেরা রোল অনে সময় বয়ে যায়,
আজান মসজিদে
ওপারে ভাঙে ঘুম,
ওপারে গাজন মেলা এপারে মহা ধুম।
সাঁকোর তলায় জীবন নামে ঘাটে,
সময় থমকায় এখানে জাম্প কাটে।
নিছক বৃষ্টির গল্প
বৃষ্টিতে ভিজে চুব।
চশমার কাচ বেয়ে
পাঞ্জাবির হাতা বেয়ে
জুলপি বেয়ে, বুঝলি মেয়ে,
টুপ টুপ ঝরছে জল।
ভিজেছিস তুইও খুব।
সালোয়ার কামিজ ভিজে একসা
চুলে গুঁড়ি গুঁড়ি বরফকুচি যেন
নিচের ঠোঁটের জলের ফোঁটাটা
এই পড়ে যাবে যাবে
কিন্তু পড়ছে না।
ভিজে ওড়নায় তুই
জড়িয়ে নিয়েছিস গা।
ছাতাটা বন্ধ রাখ, ও মেয়ে!
এ তুমুল বর্ষায়
পাগলা হাওয়ায়
কে আটকায় এ ভাসান –
ওমা! মেয়ে, তোর ওড়নায়
পাঞ্জাবির রঙ মাখামাখি!
পেন্সিল
লিখে চলেছে পেন্সিল পাতার পর পাতার পর পাতা,
লিখে চলেছে পেন্সিল চুপচাপ চুপচাপ নির্বিকার;
মাঝে মাঝে ভেঙে পড়ে নতুন উদ্যমে জেগে উঠে ফের
প্রাণের চালিকাশক্তি বিলোয় দুহাতে একটু একটু করে এভাবেই;
লিখতে লিখতে ক্ষয়ে যাচ্ছে ক্ষয়ে ক্ষয়ে শেষ হচ্ছে তার
যতটা জীবনীশক্তি সবটাই, সবটাই হে বিধাতা।
Leave a reply