ফোনের এপারে কান্না ওপারেও। মাঝখানে ছোট
নদী। ভেসেছে নৌকা। কাগজের। লেখা : \’ভালো থেকো ভালো রেখো…\’
দু-তীরেই খাসা প্রসন্ন মুথাঘাস।পিঁড়ি পেতে ডাকে:
এসোজন-বোসোজন–কান্নাটি ধুয়ে যায়। দু-আঁচলা আলো-ঢেউয়ে। গা ঘেঁষে তখন নদীচরে চখাচখি , কাদাখোঁচারাও দঙ্গল বসিয়েছে …
নদী ঢেউ আজ হলুদ মাখাবে গেরুয়ার ছোপ
দিয়ে। গায়ে হলুদের তত্ত্ব পাঠাবে সুপারি গাছের সারি। তীরে তীরে যত পানের বরজ উড়ে আসে তাড়াতাড়ি–চখাচখি, সারি গান গেয়ে যায়
পাড়ে পাতা আছে দূর্বা বিছোনো মা\’র হাতে ঢালা মাদুরে…। \’চলো ডুবি…\’
\’—কী যে লাভ হত দেবতাটি হতে চেয়ে\’
রোদ্দুর-প্রিয় প্রজাপতি ওড়ে কেয়াফুল ঘিরে ঘিরে
চুমার আলোয় জ্যোৎস্না নামবে তিন প্রহরের তীরে
ভাই ছুটি
ক-খানা তিল ! গুনব এবার। নির্ভীক । শুনব যা
হয় তাই শুনিও। নিশ্চুপ । তক্কেতক্কে থাকবও!
ঝুঁঝকিবেলায়। নরম আলোর জাফরি…
দোয়েল ওড়া। উঠোন চৌকাঠে। নামল চরমক্ষণ। মনখারাপের। শিলাইদহে। আলোয়-হাওয়ায়।যেন। —ওই বর্ষার ষাঁড়াষাঁড়ির বান । হেলান দেওয়া
বিল-বোর্ড-এ কি দারুণ দারুণ বিজ্ঞাপনে…
গেল মাসের,তারিখ কত?জানিয়েছিলে।সঙ্গকাতর
তরুণ-রবি লিখে গেছেন ? ছিন্ন পাতায়। কৃষ্ণচূড়া।লুকিয়ে ছড়ায়। পয়ার গুলাল। অন্ত্যমিলের
পিচকিরিতে ছুঁড়ছে আতর
\’ভাই ছুটি\’–কী, কিচ্ছু জানে…
পরিযায়ী-উড়ান
রাত্রি শেষ! ভোর হল? সম্মোহন। ভুলে যাওয়া যায়
তোমার ঠোঁটেরআলো? হাতের রুটি। যে আলোয় পথচিনে, নোংরা-ফাটা, পাথরেকাটা–পায়ের তালু
হেঁটে আসছে সহস্রদিন-সহস্ররাত…
কাটা-মুন্ডু। কোলে নাও মাথা। লীলাপদ্ম হাতে
দাও, থরথর কম্পমান —মৃত মুখে তুলে দাও
ঢেউ…হে অনন্ত রেলপথ, ঝোড়ো রাত। হে উত্তাল ফুটে ওঠা দুটি মউ ফুল ; ভুলে যাব–নাভি তিল !
তরঙ্গ আছড়ে পড়া–শরম নেবাল…
বলো তবে কেউ হও ! অন্য স্বদেশ। অন্য জন্ম, কেউ ? চাঁপা গন্ধে জ্বলে ওঠে আদরের আলো…
টেমি লন্ঠন–একমাত্র দরজা আমাদের
—তুমি এর কিচ্ছু জানো না :
হাঁটু মোড়া, ধাক্কা দেওয়া..\’জোরে\’…অসহ্য কলরব
দু-ছত্রে লিখে রাখা যায় ? পরিযায়ী জন্ম দেওয়া,
রাজপথ। রেলপথে কে ছড়াল
উড়কি ধানের-খই… বিচ্ছেদের রাস উৎসব !
ডলপুতুল
ডলপুতুল। কেড়ে নিয়ে।
বিশেডাকাত পাঁজাকোলা। এখন
রাত-বারোটা ঠিক : \’মহিলা\’ হয়ে উঠছি মাগো!
যন্ত্রণায় নীল কাতর। কনের সাজ যায় ধুয়ে। কালশিটে দাগ-আঁচর-কামড় , তোমরা জাগো।
তোমরা ঘুমাও। ডাকব না আর…আকাশ তোমায় খাঁচার শরীর দেখাব না…আহত এই পাখির ডানা
ঘর পেয়েছে। পেয়েছে বর–গোদরেজের আলমারি
বন্দী থাকে রাইকিশোরী। সিঁথির সিঁদুর হাতের নোয়া। ফুটল চোখ। \’মহিলা\’ আজ।
তোমাকে ছাড়া পারছি না আর। আঃ! তোমাকে
ছাড়া– দু-মুঠো ভাত। সন্ধ্যারাগেই সোহাগ-পানি।
নিজপুরুষ। ডিপ্রেশন ডিপ্রেশন। রাংতা খোলো।
ওষুধ চাই
দেহাতি সেই বাংলা বুলি। সবই ভুলে যাচ্ছে পাখি। দেহাতি সেই গাছপাড়া সব।চাইলে পাই মিষ্টি ফল।
এইতো আবার খুঁজে পাচ্ছি হারিয়ে যাওয়া চোখের জল…
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট
দু\’দিনধরেই নিম্নচাপের গুঁড়িগুঁড়ি দুত্তেরিকা! গুড
মর্নিং ম্যাসেঞ্জারে। চিত্রসহ গুডনাইট। স্ক্রিনেই খোলা-পাওলি দাম–বক্ষজোড়া গুরুদেবের
পূজারিনি–
মাত্রাবৃত্তে মজাক করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট : \’আমি চিনি গো চিনি তোমারে…\’
সকালটুকু সামলেউঠে কাজেরধান্ধা ঘোড়াছোটাই
শরীরী সাঁঝবাতি যখন ? একলা-একা বুক জ্বলে।
টিভিরস্ক্রিনে প্রিয়তমার হৃত্তিকের বইশুরু।বই পড়া
নয়-কোহলি নয়–বোতল খোলা মনকেমনের এ্যাল কোহল : স্ক্রিনটাচে হাত।ওদিক থেকে বাঘিনি ঝাঁপ
–\’ঝেড়ে কাশো–বুড়োঢ্যামনা\’
বাক্সবন্দি লাশ
[\’আকাশ-পারে কিছুই কিগো বইল না–\’]
কত\’শ ছাব্বিশ সাল আজ? বন্দি করে রেখে গেছে
দিন-প্রতিদিন ! দেখিনা দোয়েল-কোয়েল ওড়া পথ
ক্ষীণ সরু আলেয়ারস্রোত।বাঁহাতের শেষচিহ্ন রুলি
এয়োতীর। টবের অর্কিড ঝোলে বেড়াবিনুনিতে
কে রেখেছে আইলাইনার ! কে আঁকে বাক্স-গায়ে দাগ নিয়মিত। নিয়তির আয়ু…বন্ধুজন হও তবে
শত্রু নয় কেন ? জন্মদিনে পাওয়া ডল— হাসতে হাসতে বড়ো হয়ে গেছে দেবদারু। গুলির চিহ্ন
দাও বন্দি হারমোনিয়াম। দাও দাও বেরিয়ে আসুক কোমল ধৈবত : \’যেন তারা কার আশে…\’
গন্ধর্বরীতি
কুপির শিখা।
ঝলমল করছে
আমাদের
রাত্রিদাগ।
উজ্জ্বল হয়ে
ওঠে লজ্জা
রাঙা পরির দু-ডানা
বল্গাহারা নাভিকূপ
ডুবে যাচ্ছে–
জলে
ডোবা
সোনার বালতিটি
শুয়ে থাক গান্ধর্ব-গভীরে
কোয়ারেন্টাইন -১
বৃষ্টির পর। সপসপে কালো পাইথন। মাত্রাবৃত্তে
পড়ে আছে পথ। গুনে গুনে হাঁটি। কতদিন দূরের সওয়ার…
কে ডাকে পথে পথে ? গৃহত্যাগী জোছনার রথ…
এ গ্রহের গ্রন্থ ছিঁড়ে চলে যায় কারা ? কত
পাতা? শ্মশান বন্ধুরা… বলো, কি কাজ বকুল জানে ঝরে পড়া ছাড়া :
\’নক্ষত্রপল্লীর নীচে বাঁধি ঘর… চলো\’
দক্ষিনের আকাশে আজ যূথবদ্ধ সেনা। দরিদ্র, রত্নেরকুঠুরি ছেড়ে তবু আসবেনা।
\’পুণ্যিপুকুরে কেউ জল সরে?\’
সবুজে ঢেকেছে সাঁচিশাক। লাদাখের ঘন সে চাদর , ছুঁড়ে ফেলা ভাঙা শাঁখা খাবে
\’সবপাখি ঘরে ফেরে, সব নদী–কে কোথায় যাবে!\’
একটি ব্যালাড বা ব্লুজ
রুমাল হারিয়ে গেছে। গন্ধমাখা প্রিয় পারফিউম
ভেসে আসছে:প্রাচীন ব্যালাড।গ্রাম্য ব্লুজ। অন্তরায় গিয়েও ফিরে ফিরে সঞ্চারীতে অলিগুঞ্জরন..
\’চুপ করো , ঠোঁটে ঠোঁট দাও\’
শুষে নিই।ঠোঁটের জড়ুল। ভুল করো।পাতা ওল্টাও
বালিশ নিয়েছে শুষে ভালোবাসা ঘাম
\’মনে আসছে সাতপাক!\’ রোদ তত গাঢ় হয়নিকো
হিজ হিজ, হুজ হুজ…
ভেসে আসছে আড়বাঁশি। মুরারির মতো লিঙ্গটান
তোমার তাতার
[\’পাখি বাসা বাঁধে লতায়-পাতায়, তুমি বাঁধ প্রেম টবে টবে\’–হোমার।]
ছিল বকুল-কিঞ্জল টিপ। ভ্রূসন্ধিতে। জংলা জমি পেরিয়ে কৈশোরের স্কুল-চালা। সূর্যাস্তের কুঁচফল
কুড়িয়ে ফিরতে। লাল-কালো ভালোবাসায় ভরে
উঠত কোঁচড় তোমার।ডান হাতে হলুদ জল লজ্জ্বা
বতী-সাদা কেশরদাম-গোলাপি রাংচিতার বীজ। মুখে বিড়বিড়—হোমারের পঙক্তি ভালোবাসা। তৎসম-গন্ধে ভরে উঠত সারা শরীর।পোড়ামাটির টব। আমারও। ভুলেই যেতাম তাতার-দস্যু
হওয়ার শখ। তুমি চলে যেতে মাগধী প্রাকৃত থেকে
দুশোবছর দূরে। ঝুঁকে কথা বলতে , টবের সঙ্গে– সদ্যোজাত গাছের ভাষায় জলঝারি আগিয়ে দিতাম। আনমনা ঝরে ঝরে পড়ত রংতামাশার
বিন্দুবারি…
5 comments on “কবিতা : চন্দ্রনাথ শেঠ”
বিকাশ গায়েন
ভাল লাগলো
Bhajan Datta
দারুণ। কবিকে জন্মদিনেে শ্রদ্ধা 🙏
Sudip Chattopadhyay
লেখাগুলো বেশ ভালো লাগলো
Unknown
এই কবিতা গুলোই যে সব গ্রামীণ অনুষঙ্গ ব্যবহার করা হয়েছে তা লেখার আত্মার সঙ্গে চমৎকার মিশে গেছে ❤
Unknown
এই লেখাগুলো একটাও পুরোনো হবার নয়। কবিকে (কাকুকে) শুভেচ্ছা আবারও।