মেঘ ও শ্রীমতী চুম্বন
১.
আমি তো পরাগে তাকে ঢালি
তাকে আমি ঢালি খোলা মদে
কত পাখ্ কত যে পাখালি
উড়ে আসে সোনার গারদে
একটি নধর আলো আসে
আসে এক বিকেল-বালিকা
বালিকা আমায় ভালোবাসে
তবু আমি চিরকাল একা
চিৎকারে জল ঢুকে গেছে
পেটে ভাঙে খিদের বানান
সেটা কেউ বুঝতে পেরেছে?
ছুটে গেছে সব পিছুটান
যদি বলি, তোমারই ছিলাম
তুমি তবু আমার হলে না
আমাদের কোনও ডাকনাম
কেউ আর মনে রাখবে না…
২.
আঙুলে আঙুল রাখো হাত ধরো দু\’জনাই বাঁচি
যে সময়টা বয়ে গেছে তাকে আর কী করে ফেরাব?
কী নিয়ে এসেছে কেউ? কতটুকু নিয়ে যাবে যখন যাওয়ার?
নিজেদের মেরে ধরে কাদা ছুড়ে কতটুকু পাব?
আসলে যে আমাদের ছোট-বড় ক্ষতগুলো এক
শুধুই নিজের করে নিজেরটা বুঝতে শিখেছি
কেউ কারও দিকে চেয়ে দেখিনি তো কতখানি ফাঁকা
তুমিও বুঝেছ ভুল, আমিও তো চিরকাল ভুল বুঝে গেছি
হিংসা বিবাদ রাগ যার থাকে তাকেই পোড়ায়
তুমি কি পুড়েছ কম? আমারও কি এ বিবাদে কম হল পোড়া?
এইভাবে সকলেই প্রতিদিন একা হয়ে গেছি
আমাদের হৃদয়টা মুখোমুখি বড় ভাঙাচোরা
এসো, এ বিপদে শুধু আমরা শরিক, কেউ নেই কাছাকাছি
আঙুলে আঙুল রাখো, হাত ধরো, দু\’জনাই বাঁচি…
৩.
তুমি যাকে এতদিন ধরে শুধু ভালোবেসে গেছ
আর সে তোমার সেই ভালোবাসা গ্রহণ করেনি
অথচ হঠাৎ তার নতুন প্রেমের কথা বুঝে
তাকে কি করবে ঘৃণা? তাকে ভালোবাসা ছেড়ে দেবে?
বরং নিজেই তুমি সরে যাও, থাকো দূরে দূরে
পারলে মুছেই নিয়ো নাহয় নিজেকে পুরোপুরি
তারা সুখে থাক তারা ভালো থাক– এটুকু তো চাওয়া!
এ চাওয়ার থেকে বড় আর কোনও সত্য আছে কি?
জীবনের থেকে আর এর বেশি পাওয়ার থাকে না
জীবন তো ঝরাপাতা– একদিন খসে পড়ে যায়
তোমার থেকেও বড় প্রেমিক কি আর কেউ আছে!
সব প্রেম পরিণতি পাবে বলে কোনও কথা নেই
অতএব এইটুকু জেনে রাখো, ভালোবাসো যাকে
সে তোমার সবকিছু তুমি তার কিছুই ছিলে না…
৪.
চলো, তবে এই দিনটার আরও কাছে
আরেকটু হেসে মাথা নত করে রাখো
দিনটাকে বলো, এখনই যাবে কি চলে?
দিনটাকে বলো, আরেকটু কাছে থাকো!
প্রতিদিন, রোজ… কত দিন চলে যায়
কত কত ধুলো জমে যায় ডাকনামে
সেই নাম ধরে কেউ তো ডাকে না আর
যে কোনও সফল কর্ম যে নিষ্কামে!
বলা তো হয়নি কিছুই হয় না বলা
আরও কত কত না-বলারা যাবে থেকে
কোনও কোনও কথা খোলা যায় পুরোপুরি
আর কিছু কিছু রেখে দিতে হয় ঢেকে
চলো, তবে আজ এইবারে এই বেলা
এই দিনটাকে দু\’হাতে আঁকড়ে নিয়ে
চোখে চোখ রেখে সোজাসুজি বলা ভালো
বলে দিতে চাই পুরোটা তোমাকে গিয়ে–
বলা তো হয়নি এভাবে কখনও আগে
তোমাকে দেখলে মায়ের মতোই লাগে…
৫.
বেদনার প্রতিটি দিশায় খুলে থাকে নিয়তির হাওয়া
তোমার…
কাছে এসে দূরে চলে যাওয়া
আমার স্মৃতিও তবে একদিন পুরোনো হবেই?
মনে হয়,
তোমাকে ভোলার মতো আর কোনও সমাধান নেই
৬.
তুমি যে মেসেজগুলো লিখে লিখে ডিলিট করেছ
আর যে মেসেজগুলো টাইপ করেই দাও মুছে
কখনও বলিনি আগে– জেনে রেখো, সেগুলোই আমি
তুমি যে কান্নাগুলো কোনোদিন দেখাতে পারোনি
তুমি যে রান্নাগুলো মনেমনে আমাকে খাওয়াও
বুঝতে পারোনি কিছু– জেনে রেখো সেগুলোই আমি
যে গান তোমার ঠোঁটে গুনগুন বেজে বেজে ওঠে
যে গান আমার কথা ভেবে নিয়ে তোমাকে বাজায়
হয়ত বোঝোনি আজও– জেনে রেখো, সেগুলোই আমি
তুমি যে রাস্তা দিয়ে রোজ রোজ হেঁটে চলে যাও
তুমি যে পথের বাঁকে থমকে দাঁড়াও প্রতিদিন
কখনও পাওনি টের– জেনে রেখো, সেগুলোই আমি
যেসব ক্লান্তি-মায়া ঘরে ফিরে মুছতে চেয়েছ
যেসব শান্তিগুলো তোমার আরামটুকু জানে
তুমি তো জানো না কিছু– জেনে রেখো, সেগুলোই আমি
তুমি যাকে ভালোবাসো তবু সেটা মানতে চাও না
ডায়াল করেও যাকে… ফোন কেটে দাও বারবার
তারা আর কেউ নয়– জেনে রেখো, তারা সব আমি
তোমাকে যে চুপিচুপি রোজ রোজ ছুঁয়ে চলে যায়
যে তোমার অনুভূতি না-জানিয়ে আগলে রেখেছে
বুঝতে চাওনি তাকে– জেনে রেখো, সেটা শুধু আমি
যে সব কবিতাগুলো তুমি কিছু বুঝতে পারো না
আর যে কবিতাগুলো তোমার ভেতরে বয়ে যায়
নিজেকে প্রশ্ন করো– জেনে যাবে, সেগুলোই আমি
তোমার শহর ছেড়ে তুমি যাকে চলে যেতে বলো
একবার চলে গেলে যে মানুষ ফিরতে পারে না
এটাও বলতে হবে? আর কেউ নয়, সেটা আমি?
যে প্রেমিক মরে যেতে যেতে রোজ তোমাকে বাঁচায়
যে প্রেমিক হাসিমুখে তোমার তিরস্কারে মরে
সে লাশের কাছে ঝুঁকে চেয়ে দেখো– শুয়ে আছি আমি
৭.
যে পাখি আমাকে ছেড়ে উড়ে চলে গেছে বহু দূরে
রঙিন দু-চোখ তার পরে আছি যেকোনো রোদ্দুরে
ও বন্ধু তোমার কাছে আজীবন থেকে যাবে ঋণ
তুমি কি আমাকে ভাবো? আমি ভাবি আজও প্রতিদিন–
কতটা ধোঁয়ায় কত গ্লাসে গ্লাসে জীবন কাবার
কত হাসাহাসি কত অভিমান তোমার-আমার
দূরে সরে থাকা তবু ভালো জানি স্মৃতিতে সময়
আরও দ্রুত কেটে যাবে যেভাবে কাটার মতো হয়
কত যে শাসন কত কারণে বারণে মাখামাখি
আমাকে একাকী রেখে দূরে উড়ে যায় সব পাখি
ফুল যে ফোটায় সেই গাছ তার খবর রাখে না
অথচ মাটির কাছে শিকড়টা কতখানি চেনা
শিকড় উপড়ে গেছে স্মৃতিও খসেছে ঝুরোঝুরো
দু-জনে আমরা আধাআধি আজ কেউ নই পুরো
৮.
জানি না, কেন যে এত চুপ হয়ে থাকা
জানি না, কীসের এত কেন যে অভিমান
বোঝাতে পারিনি আমি, বোঝানো যাবে না
বারেবারে হেরে যাওয়া জেতার সমান…
৯.
দেখাটুকু হওয়া না-হওয়ায়
তুমি-আমি
পুড়ে গেছি দূরত্বের আঁচে…
১০.
তুমি কি আমাকে চাও? চেয়েছ কখনও কোনোদিন?
আমি যে তোমাকে শুধু চেয়ে গেছি বিনা প্রতিদানে
নাহলে দাঁড়াব কেন একটা ঝলক দেখে নিতে!
নাহলে কেন যে সারাদিন ধরে অপেক্ষায় আছি!
নাহলে কবিতা কেন লেখা হবে এভাবে এতটা!
নাহলে কেন যে ফোন করে ফেলি বারণ তবুও!
বিষাদে বসত করে এতখানি ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেছি
দু\’হাতের থেকে সব আয়ুরেখা উড়ে চলে যায়
তোমার শহর ছেড়ে দূরে আছি, ছাড়িনি তোমাকে
যে কোনও স্পর্শে আমি তোমাকেই ছুঁয়ে আছি, দেখো
আমি যাকে ভালোবাসি তাকে ছেড়ে যাইনি কখনও
চলে যাওয়া মানে সে তো মৃত্যুতে চিরতরে যাওয়া
তাহলে সেটাই চাও? চলে যেতে দেবে সম্মতি?
একবার মরে গেলে কোনোদিন ফেরাই হবে না…
4 comments on “কবিতা : গৌরব চক্রবর্তী”
এলেম নতুন দেশে
Excellent
বিকাশ গায়েন
অন্যরকম স্বাদের কবিতা ।ভাল
PriyankaPuja
গৌরবের লেখার চলন আমার প্রিয়। প্রত্যেকটা লেখা পড়তেই ভালো লাগলো। কিছু আমার পড়া আগে, তাও ওর লেখার সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি হয়ে যায় পড়তে পড়তে, সেটাই ভালো লাগে।
Ananya Pathak
এক পশলা বৃষ্টির মতো একগুচ্ছ কবিতা।