৪
তথাপি নসিব মেনে বুকে ধরব কখনও ছাড়ব না
ফুসলিয়ে বাহুদ্বয়ে দুটি বুক ফোঁস দিতে দিতে
বিষ ঢালব উভয়ের ঠোঁটে জেগে উঠবে প্রিয় ওড়না
তার নীচে অস্তিত্ব ও এক আত্মা জন্মিবে ইঙ্গিতে
অনন্তে টাঙানো হবে ঝুমকো, চুম্বনের প্রতিচ্ছবি
ক্ষেতময় রাধিকার স্তনরাগ, ক্ষত চুঁইয়ে নামে
শরীর, পরমেশ্বর! বাঁচাবে এখন সুর যদি
তৎকালে তুমি জয়ী, প্রশমিত হবে, ধ্বংসে যাবে
তথাপি নসিব জানি যেটুকু গড়েছি নম্রমূর্তি
আমিও মাটির প্রেমী কেন এত বিক্ষত করেছি
নতুন মানবীছায়া তবু দাও ভ্রুণের আকৃতি
স্পর্শের দ্যোতনা, নেশা, পান করি আগ্নেয় চোখে কি?
অশ্রু, এক দিব্যনারী, সে আমাকে বাঁচাবে এখন
প্রেম ও ব্রহ্মের কাছে বিষাদ পাঠাব এতক্ষণ
৫
প্রেম ও ব্রহ্মের কাছে বিষাদ পাঠাব এতক্ষণ
উস্কানি ব্যতীত কিছু পীঠস্থান খোলা রাখে দেহ
সেখানে সংশয় ঝুলে পাখিজন্ম আমার জীবন
জোনাকি গর্ভের জলে আলোপুঞ্জ আর নষ্টস্নেহ
কাচি বা চাকুর ধার, সহিষ্ণু সহ্যের প্রেমালাপ
কুচি কুচি রক্ত কণা নিমেষে প্লাবিত নগ্ন ব্যাধি
টেবিলে ল্যাম্পের স্নায়ু, মৃত প্রায় ধুকপুক শ্বাস
কলম ও খুলি চুপ, ও সখী, ও ব্রহ্ম, এসো সুধী
কবোষ্ণ হৃদয় কুঁজে বিহ্বলতা কে কত দেখেছি
কত জ্যোৎস্না! শান্ত চোখ! গড়িয়ে দিয়েছে অশ্রুহ্রদ
এ-হীন আঙুল, প্রিয় প্রতিচ্ছবি, সিঁথি রাঙিয়েছি
সমুদ্র বা সংঘর্ষের মাঝে ফেলে আসি চর্যাপদ
আমার বিষাদ, পান, যতই চিবোও, তত লাল
মরচের কুটিরে দেখি সন্দেহে সংশয়ে এ-আখ্যান
৬
মরচের কুটিরে দেখি সন্দেহে সংশয়ে এ-আখ্যান
শরীর, গুহার ন্যায়, যত জ্বালব চিঙ্গারির কণা
দেখো স্মৃতি, উস্কে ওঠো, শোনো মেয়ে স্নায়ুচিত্রগান
যদি বা হদিশ পাই, শুষ্কমুখ ধাতব অঙ্গনা
রন্ধ্রে রন্ধ্রে পালাব না, গড়ে দেবো অশ্রুর গহনা
এমন প্রপাতমুখে ভিজে চুল, জোয়ারের হৃদ
স্মৃতিকে আগুনে ফেললে মৃদু কাঁদে উল্কার মোহনা
কুঁড়ি ও স্মৃতির কাছে, তুমি শিশু, সারল্য অঙ্কিত
বিদগ্ধ গ্রামীণমূর্তি, সাড়হীন ধুতুরার টব
জাদুবিদ্যা, গৃহকাজকর্মহীন মেয়েটি তাকায়
সমস্ত স্মৃতির দায়, ফণা, বিষ, প্রেমের গৌরব
যে স্মৃতিতে প্রেম নেই মহৌষধ নিয়ে কেন যায়?
আর নয়, এ-দংশন পুষে রাখে সাপুড়িয়া মন
বিষ তুলি, রক্ত ওঠে, স্মৃতিও জিহ্বায় ঝলমল
৭
বিষ তুলি, রক্ত ওঠে, স্মৃতিও জিহ্বায় ঝলমল
ভিতরে, অনন্তে নড়ে দৃশ্যাতীত জ্যোৎস্নার ফুল
অবয়ব ফুটে ওঠে, লক্ষ্যে তুমি তৃপ্ত হও জল
পাথুরে চোখের নীচে, নেতিয়ে পড়েছে ব্রহ্মকূল
যে সূর্যের অস্ত নেই সে ভ্রান্ত আমার গোপবালা
উজ্জ্বল কবিতাবর্ণ দেহের গড়ন, ইঞ্চি মাঝে
সহজ শোক ও সুর নাভিস্থলে চিরপঙক্তিমালা
স্পষ্ট বা প্রতীকময়, মুগ্ধতাও ভণ্ড শিব সাজে
জীবন, দীঘির জল, আবছায়া হয় মৃদুপর
শুধু খুঁড়ে খাই পাঁকপদ্মস্তন। বিমূর্ত নারীটি
শত প্রতিমার মতো চেয়েছে যে সিঁদুর-আকর
এখন হৃদয় কুঞ্জে দ্ব্যর্থভাষা ফেরাও, অতিথি
মধুর ব্যতীত ভোমরা অচল রেখেছে যোগাযোগ
প্রতিটি শোকের বুকে ছিপ ফেলে বসে আছে শোক
2 comments on “কবিতা : বিশ্বজিৎ মাহাত”
জয়ীতা ব্যানার্জী
খুব ভালো হয়েছে।
Amar Bangla
ভালো হয়েছে