কবিতা আবেগী, এমনটা অনেকেই বলেন। তবে আবেগহীন নৈর্ব্যক্তিকতা মাত্রেই কবিতা নয়, এমনটাও নয়। আবেগ এবং আবেগহীনতার মধ্যে এক অদ্ভুত ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হয় কবিকে। কবিতা মুক্তি। তা বলে কবিতা জীবন থেকে মুক্তি কখনোই নয়, মৃত্যু থেকে মুক্তি এমনটাও নয়। তাই কবিতা আত্মহত্যা প্রবণতা থেকে মুক্তি দিতে পারে এমনটাও সঠিকভাবে বলা চলে না। কবিতা কবিকে যেটুকু দিতে পারে তা হল মগজের অর্গাজম। জর্জ এলিয়েনের বর্ণিত যে ডিফেন্স মেকানিজম তা চিনিয়ে দেয় মানুষ অবচেতনের ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তিকে প্রশমিত করতে পারে কবিতার মাধ্যমে। তাহলে কবিকে কখনোই নৈর্ব্যক্তিক আখ্যা পুরোপুরি দেওয়া যায় না। যে অবচেতনকে মানুষ ঢেকে রাখে, আড়াল করে রাখে, সেই অবচেতনে সংকেত চিহ্নের মাধ্যমে কিংবা উৎকটভাবে প্রকাশ্যে এসে আমাদের মুখোমুখি দাঁড়ায় কবিতায়। কবিতা তাই কখনোই কোনোরকম অবদমনের শিল্প নয়। যদিও কোন শিল্পই অবদমনের সৃষ্টি মাধ্যম নয়। কারণ সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে শিল্পী নিজেকে মেলে ধরে। সেক্ষেত্রে এই মেলে ধরার অনায়াস প্রয়াসের মধ্যে দিয়েই কবি তথা শিল্পীর ঘটে মুক্তি। আর এই মুক্তিই আমাদের সাধনের সেই শূন্যতা যা কখনোই ডিপ্রেশনের নিম্নগামীতাকে প্রাধান্য দেয় না। এই প্রাধান্য না দেওয়ার প্রধান কারণ হল সেক্ষেত্রে শক্তি তথা ধারকের সমস্ত প্রয়াস ঊর্ধ্বগামী হয়, তখন সেই সাধন প্রয়াসে কোনরকম নিম্নগামীতার আয়াস লক্ষ করা যায় না। সেক্ষেত্রে খানিক রূপে হলেও শিল্পী আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারে। কবিতা এমন এক শিল্প মাধ্যম যেখানে ‘শব্দব্রহ্ম’ এমন তত্ত্বের সার্থক রূপ খেয়াল করি আমরা। কবিতার অন্তর্নিহিত সুর প্রকাশ্যে এলে তা হয়ে ওঠে গান। তাই বলা চলে কবি গায়ক না হলেও, কবিতায় লুকিয়ে থাকে তার অজানা গায়কী।
সম্পাদক শুভদীপ সেনশর্মা মৌমিতা পাল
Leave a reply