অসমাপ্ত চুম্বনের ধ্বনি
১
গোপন ইথারে পাই প্রিয়তম সাড়া,
পৃথিবীর বনে বনে চিরঞ্জীব সুধার আঘ্রাণে
কতবার উথাল-পাথাল,
হৃদয়ের বর্ণমালা অনিদ্রা তাড়ায় লোভ ও হিংসার
হরিণের চোখে দেখি ক্লেদজ কুসুম…
অলৌকিক চন্দ্রিমায় দুলে ওঠে ঢেউ
ঘাসের জীবন সেঁচে মেতে ওঠা সবুজ সঙ্গমে
শ্যাওলার আর্দ্রতা খুঁজি…
প্রাগৈতিহাসিক গুহা বাতাসের স্বরলিপি আয়ত্তের শেষে
খুলে দেয় ধ্যানপীঠ
অসংখ্য নক্ষত্র গায়ে মেখে
চারণেরা দুঃখ ঘেঁটে পাকদণ্ডী পেরিয়ে এলেন
ঈশ্বরের বাগানে জ্বলছে দাউদাউ খিদে
অল্পস্বল্প রোজগারে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে অনিত্য সংসার।
২
নির্লজ্জ ইশারাগুলি ফাঁদ পেতে বসে আছে আকাশের দিকে
উজ্জীবিত প্রেমে নাকি মৃত্যুদণ্ড সম্ভোগের আগে
দু-দণ্ড নরক দেখে এখানে এসেছি।
অন্তর আগুনে শুদ্ধ করি পাথরের বুক
অনিঃশেষ প্রতিবিম্ব রোদ নকশায়
দুঃখ দিয়ে আমাকে চেয়েছো নিদাঘের ধ্বংসস্তূপে।
৩
হৃদয়ের রং সেঁচে যে কলি ফোটেনি আজও
তার জন্য দুঃখ করিনি
পরম ঐশ্বর্যের গাঙে যে তরণী বয়ে গেছে
সে পথের দিশাটুকু দিও
অক্ষয় ভাণ্ডার তার
চিদাকাশে লুব্ধকের মতো।
৪
মনগড়া বিকেলেরা উঁকি দেয় কৈশোরের বনে
অবাক পাতারা তার মেলে ধরে ডানা
রংহীন উৎসবের পুরোনো অভ্যাসে লেখা চিঠি
আমাকে ডেকো না তুমি সজারু গহনে…
পরিত্যক্ত বেলাভূমি লিখে রাখে
অসমাপ্ত চুম্বনের ধ্বনি
প্রান্তরের বালিহাঁস ইশারায় উড়ে আসে কাছে
না বলা কথার দেশে চাকাদের ফিরে ফিরে আসা
ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভাঙে জলের প্রত্যাশা…
৫
দূরের শহর থেকে সেই কবে এসেছিল ডাক
আরোগ্যের ওষুধের মতো
তোমার পেখমহীন আপ্যায়নে বেড়ে গেছে ভুলের বহর
তেপান্তরের গানে মুখ বাড়িয়ে উঁকি দেয় প্রাত্যহিক দেনা
পথের ধুলোর কাছে শিখে নিই সোহাগের ভাষা
পেরিয়ে গিয়েছি কবে সূর্যহীন অরণ্যের টিলা
৬
ধুলো খেলার শৈশবে পাতাদের বাসর জাগর মনে পড়ে
দূরের গ্রামের দিকে চলে যাওয়া রাস্তারা
তাকিয়ে রয়েছে নক্ষত্রের দিকে
দেহাতি আকাশ জুড়ে হেমন্তের পথভ্রষ্ট শিউলিরা ফুটে আছে
স্ফটিক পাত্রের মতো মদিরার দেশে।
মুঠো মুঠো ধুলো মাখা প্রহরেরা মিশে গেছে আয়ুর রেখায়
ইঙ্গিত ও অনুমানে মুছে গেছে বিভেদের ধ্বনি
আমরা স্নান সেরে প্রার্থনা করেছিলাম জীবিত ভাষায়।
৭
বিশ্বাসের চোখে মুখে ফুটে আছে পবিত্র ব্যাধি
ধ্যানের বাতাসে ওড়ে সংঘ পতাকা
সীমাহীন অন্ধকারে চোখ জ্বেলে বসে আছেন ভিক্ষুর দল
স্মৃতিরেখায় স্পষ্ট হয় কুন্দশুভ্র শৈশবের স্মৃতি
তন্নিষ্ঠ পাঠমালায় উজ্জীবিত মগজের আলো
পুরোনো নগর ছেড়ে হেঁটে চলেছেন মহাকাল
মানস পূজার বেদী দুলে উঠছে বোধিবৃক্ষতলে।
৮
পানের বাটার কাছে আঙুলেরা স্পর্শ রেখে গেছে
তুচ্ছতম যাপনের মধুমাখা বাক্যগুলি জেগে আছে কথার ভেতর।
অযুত কদমফুল ফুটেছিল পাড়ায় পাড়ায়
পবিত্র চিহ্নগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়তেই
অশ্রুতে বাঁচিয়ে রাখি বুকের জমিনে পোঁতা আমলকী চারা।
৯
মৃত্যু কী বইবে না জাগতিক দেনা
সব শেষ মৃত্যুতেই একথাও অর্ধসত্য মানুষ জেনেছে।
স্বতন্ত্রতাশূন্য এই জগতের কীট পরমানু
এ পরম সত্য জানি প্রপঞ্চরহিত…
বনজ সবুজ বাড়ি, সম্পর্ক রচিত ক্ষয়িষ্ণু উদ্যান
দূরের নক্ষত্র নয়
আমাকে লেহন করে রক্ত-মাংসের ঈশ্বর!
Leave a reply