লক্ষ্যভেদ
চিরস্থায়ী ব্যথার পোশাক জড়িয়েছি প্রিয়,
চোখ ধুয়েছি সূর্যের লালে।
তবুও চোখের থেকে সমস্ত প্রাণ-
নিঃশেষে উদ্বায়ী।
মরা মাছের দৃষ্টিতে তোমার দিকে…
চাইব? কী করে বলো?
হে অনুগত গাণ্ডীব, ও দৃষ্টিতে তুমি
বেদনা চিনবে না-
অনুযোগ জানবে না-
আরো এক ছিলাছেঁড়া তীর বিঁধে-
লক্ষ্যভেদ করবে। কীর্তিমান।
জগতের কাছে।
অথচ হৃদয়ের কাছে বাকি ছিল কিছু ঋণ,
শুধিবার। …শুধাবার।
কোমলস্বরে।
সমস্ত মন্দ্র আর্তনাদ, চাপা পড়ে গেছে,
পার্থ, তোমার গাণ্ডীবের বিজয় টঙ্কারে।
প্রেম…
চাদরটা পেতে নিই টানটান করে,
ভাঁজ না রেখে এতটুকু…
ধুলোট কাগজ যত- জঞ্জাল- আবর্জনা,
দুইহাতে, দুইপায়ে- ঠেলে- ঠেলে- ঠেলে…
সরিয়েছি। নাগালের বাইরে।
তবু কী অদ্ভুত ঘূর্ণিঝড়, বেশরম!
বার বার ঠেলে দেয় আমারই বৃত্তের কাছে।
এঁটেল মাটির দলা, বহু রোদে পুড়ে,
এখন কঠিনতম, নিঠুরতম জেনো।
নিজস্ব ভিটেবাড়ির চারদেওয়ালের মধ্যে,
সেসব প্রাচীন জঞ্জাল, কোনো ঝড়,
কোনো দুর্দম হাওয়াই আর,
বয়ে আনতে পারবে না। বাঁধতে শিখেছি-
বাঁধ, আকাশচুম্বী। স্থানিক দূরত্ব পেরোতে
পার হতে হবে যতগুলো মরুভূমি,
সহ্য করতে হবে বারিবিন্দুহীন যতটা পিপাসা,
অতখানি ধৈর্য্য তোমার নেই হে বন্ধু।
কলঙ্ক মাথায় নিয়ে প্রেমিক হতে গেলে,
জ্যোৎস্না নয়, চাঁদকে হৃদয় দিতে হয়।
একাকী জীবনগুচ্ছ
অভিমানের মানে বোঝে
এমন দরদী প্রেমিক কই?
হে বিরাঙ্গনা, জীবনের রণতরী তুমি
এমন মাঝপথে থামিয়ে দিয়ো না।
কত প্রিয় মুখ, স্নেহ ভরা চোখ ভেসে ওঠে-
ভোররাতে। আধভাঙা ঘুমের ভেতর।
আয়ুষ্কাল, আরো একটু দীর্ঘ হয়ে যায়।
২.
অবসাদ জমে জমে ঘনতর হয় কুয়াশাযাপন।
এক হাত দূরত্বেও আর দৃষ্টি চলে না।
অনুভব মরে গেছে সে কোন পূর্বজন্মে।
ঘড়ির কাঁটার টিকটিক শব্দ বেজে চলে, আর,
অদূরে একটি গৃধিনীর চোখ শুধু
কটাক্ষে মেপে যায় দিবারাত্রির লেনদেন।
৩.
শুভ্রতাকে তোমরা পবিত্র বলে চিনেছ,
কিন্তু আমি দেখেছি শ্মশান ও মর্গের সাদা চাদর।
সাদা রজনীগন্ধার মালা গলায় প্রিয়জনের ছবি।
ধূপ, ধুনো, আতর, চন্দন…
৪.
আতরের সুবাস তোমরা বিলাসিতা বলে চিনেছ,
আমি দেখেছি তার উদ্বায়ী স্বভাব।
আমাকে দুঃখবিলাসী কবি বলো না বন্ধু,
পরিমিত উত্তাপ আর পানপাত্র ফুরিয়ে এলে পর,
যেটুকু খোলনোলচে পড়ে থাকে, আবরণহীন,
আমি সেটুকুকেই জীবন বলে জেনেছি।
একলা চলো রে
সুর ভুল হয়ে যায়। ভুল রাগে বেজে ওঠে
মায়ার তানপুরা। তার- ছেঁড়া, তান- হীন।
অথচ শিল্পীত আঙুল, ছুঁয়েছে যে অপূর্ব-
কোমলগান্ধারে; তার ব্যথাদাগ চির আতুর।
হে কান্তা, ভাঙা কলসখানি সত্য, ধ্রুবসত্য-
তার চেয়ে বড় সত্য জেনো কানুর বাঁশি।
ডালি ভরা কলঙ্কের ঝুলি, মাথা ভরে নিয়ে,
গৃহত্যাগী হয়ো না, গোপীবালা। সংকুল পথ।
স্বর ও শ্রুতি, বিদ্রোহ শিখেছে রাত্রিদিন-
কণ্ঠ চিরে, দীর্ণ করে বক্ষপ্রাচীর,
উঠে এসেছে প্রত্ন কঙ্কাল- সুখের। স্বপ্নের। প্রেমের।
রাত্রির বুকে জোনাকির আলো, কবির উপমা-
তোমায় শান্তি দেবে না। কান্তা, এ রাতে
তুমি হৃদয়টাকে বের করো খুঁড়ে। শাবল, খন্তা…
মশালে জড়িয়ে নাও আপন দেহের
চর্বি ও মাংস। খুলে ফেলো পায়ের নূপুর।
দু’ পায়ে মাড়িয়ে, পুরুষের এ রুক্ষ পৃথিবীকে-
তুমি একলা চলো রে।
প্রিয়তম ঘুম
শীতের নৈঃশব্দের মতো
জমে ওঠে অনুযোগ কিছু।
অস্ফুট ধ্বনি যেন,
ঝরে পড়া পাতাটির টুপ্।
একটানা কেঁদে কেঁদে স্থির সারমেয়।
অহেতুক মাথাচাড়া দেয় কিছু
অশুভ সংকেত।
অথচ আমাদেরও তো, প্রাপ্য ছিল
বৈচিত্র্য খানিক,
ভুলে যেতে যেতে, যাহাবিধ নব্য ও প্রাচীন,
সর্বশেষ প্রিয়তম ভাগফল
অতীতের গাঢ়তর ঘুম।
Leave a reply