স্বমেহন সুখ
সংস্রববিহীন এই সংগোপনযাপন
আমাকে তৃপ্ত করে অনালোকিত মায়ার বিভা
উজ্জ্বল আলোর নিচে দাঁড়াতে পারি না বলে
সারারাত মোমজ্যোৎস্না মেখে মেখে
মাটি আর সুড়ঙ্গের গভীরে ঘুরি, ক্লান্ত নই
তবু শহুরে পোশাক খুলে নগ্ন, ঘর্মাক্ত
আদিম মানুষ হয়ে শুয়ে পড়ি জল কাদায়
তারপর ঘুম এবং অদ্ভুত সব স্বপ্ন
আমাকে ঘিরে ফ্যালে শিকড়ের জটিলতা
স্বমেহন আর আত্মরতি সুখ;
আমি বাংলা কবিতার পাশে দাঁড়িয়ে যাই ধ্বজা হাতে…
সংবদ্ধ সংরাগ
মাঝমাঠে খেলা ছেড়ে চলে যাব
সেরকম বান্দা আমি নই,
আইহোলে চোখ রেখে স্থির আছি
হয়তো অপেক্ষা
আমি তো প্রহর গুনি, শত্রুর পদশব্দ কখন বাজে
উদ্যত থাবায় ওত পাতে তীক্ষ্ণ নখধর ছায়া
প্রস্তুত আমিও, প্রতি আক্রমণে বিষধর;
এই যে শেয়ানে শেয়ানে লড়াই, হিম সহাবস্থান
যুদ্ধের আয়ত আয়োজন, সবটাই মরজিমাফিক;
‘বিকলাঙ্গ দিনের’ থেকে যে যাত্রার শুরু হয়
শেষ হয় অসম লড়াই আর পরাভূত পরাজয়
তার কাছে নতজানু দাঁড়াতে শিখিনি বলে
শরাহত আমি আজও দৃঢ় সংবদ্ধ সংরাগ
জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে ছুটি খরতপ্ত ছাতিফাটা মাঠে…
কামিনীডালে সব স্মৃতি
এই যে এতটা দূরে এসেও দেখা হল না
অনিকেত প্রেম নিয়ে ভেসেছে সময়
একটা কামিনী ডালে সব স্মৃতিচিহ্ন
ঘোর বর্ষাতে ভেজেনি, শুকনো নিপাট
দিনযাপনের তীব্র খটখটে মায়ার
আঁশটে গন্ধ নিয়েই দিন গুজরান
সবটা দিনলিপির পাতার খসড়া; গুপ্ত
অহেতুক ভয় খেলা করে অভ্যন্তরে
ছায়ান্ধকার প্রাচীন দরজা ধরে বসেছে
সাবেকি সম্পর্ক আর ধস নামা খাদ
কোথায় যে শেষ হবে তার ঠিক নেই
তবু দেখা হলে ভালো হতো মন
খাঁ খাঁ শূন্য ঘরে ভরে ওঠা আলো-রোশনাই…
সম্মোহন ডেকে আনে জীবন
নিঃসঙ্গ ফড়িং সেও কি সম্মোহন জানে
চরাচর ভেদ করে মায়া অন্ধকার জাগে
আলোর অধিক এই আকুতি সম্বল করে
ভ্রমণের মানচিত্র বিস্তৃত পটভূমি আঁকে
হিউয়েন সাঙের দেশ থেকে সব চড়ুই
উধাও হলেও বিষাদের রঙ নেই গাছে
মাটি প্রকৃতি আর এই মানবিক দুঃখ
কোথাও প্রোথিত হচ্ছে অহর্নিশ গাঢ়
তবুও সম্মোহন ডেকে আনে জীবন
আলো আর অন্ধকার পথ হাঁটে বরাবর…
রূপকথা দীপ জ্বালে
প্রচ্ছন্ন শিকড় থেকে যে জলের উৎসার
তার অভিমুখ বৃক্ষ লালন করে;
গূঢ় গোপন যাত্রার এই মিহি চাল
অন্তর্নিহিত প্রসন্নতা আর প্রয়োজনকে
কুর্নিশ জানায়; পরস্পর সংলগ্ন ছায়া
এ ওর দিকে তাকাতে তাকাতে যেমন চলে যায়
নদী বরাবর, ফেরিঘাট অতিক্রম করে
আর অজানা দেশের দিকে ঢেউ ওঠে
প্রাণপন লড়াই আগ্রহকে বাঁচিয়ে রাখে
তবু চমৎকার দিনাবসান সন্ধ্যার শঙ্খের গায়ে
দিনলিপি লিখে রাখে কুহক জড়ানো এই
মায়া অন্ধকার, রূপকথা দীপ জ্বালে তুলসী তলায়!
One comment on “রবীন বসু”
Robin Basu
আন্তরিক ধন্যবাদ আর অভিনন্দন জানাই সম্পাদক মহাশয়কে 🙏