দুটি স্বপ্নের ভিতর বেড়ে ওঠা
যখন তুমি বলো সেই মানুষটির ঘুমের কথা
যে দুটি স্বপ্নের ভিতর বেড়ে উঠেছিল
আমার হৃদয় বিদীর্ণ হয়।
দেওয়ালের গায়ে প্রতিফলিত আলো ফুটিয়ে তোলে
শব্দ—
সম্ভবত যখন আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তারা হাজির হয়েছিল—
এখনও আমাকে ঘিরে তারা ঘূর্ণির মত ঘুরছে।
পাহাড়গুলো তারা বলে
পাহাড়গুলো দাঁড়িয়ে আছে স্থির
বিশ্বাসের রক্ত মেখে ।
যাইহোক এখন সকাল যেহেতু
তা আমাদের ধাক্কা দিয়ে জাগাবে।
পৃথিবী আর আমাদের জন্মগত অধিকার
চুরি হয়ে গেছে।
একটি পাহাড়ি রাস্তা ধরে তুমি হাঁটো।
একটা বাড়ির চিমনি থেকে ধোঁয়া বেরুচ্ছে—
যেমন করে রঙ গুলে যায় জলে—
তা সত্য বলে না।
যে ব্যক্তি আমাদের সাথে কথা বলে যাচ্ছে
এখনও অদৃশ্য
সে কে?
ইতিহাস এইসব ক্ষতগুলো ইতিপূর্বেই
উন্মুক্ত করেছে।
ভঙ্গুর, ক্ষতচিহ্ন, গাঢ় হয়ে ওঠা
রাগে।
আলোকিত রাত্রিতে আমাদের কণ্ঠস্বরই আমাদের
একমাত্র আশ্রয়।
কার দিকে আমরা ফিরবো ?
যন্ত্রণার কথা বলতে আমরা কোন্ শব্দগুলো ব্যবহার করতে পারি,
কোন্ ভাষায় আমরা বলতে পারি আমাদের
ক্ষমা করে দাও ?
আমাদের দরকার একটা পরিষ্কার স্লেট,
একটা সূর্যোদয় শব্দের,
আত্মার এক ভোর।
আমাদের দরকার শান্ত ঘর যার চিমনি থেকে
ধোঁয়া বেরুচ্ছে।
এর দেওয়ালের পাশ ঘেঁষে হেঁটে যেতে চাই ক্ষমাশীল মাটির ওপর।
আমরা ভাবি এটা সেই জায়গা যেখানে
আমরা আশ্রয় নিতে পারি
আর শান্ত হতে পারি
আমরা শান্ত হতে পারি
সত্য
পাথরেরা যা জানে
মানবসমাজ
ভুলে যায়
একটা মৃত সূর্য
আমি রাত্রিকে ছাড়িয়ে নিই
মৃত সূর্যের মাংস থেকে
আর স্কার্ফের মত
তাকে জড়িয়ে নিই
আমার মাথার চারদিকে
যদি এটি বিলাপ হয়
তারা একটা ভূমির কথা বলে যা কখনো ছিলই না,
একটা অস্তিত্বহীন জিভ,
কোনো উচ্চারণ নেই সেখানে,
কোনো শব্দ।
যদি আমাদের পৃথিবীতে আনা হয়
পরস্পরকে বোঝার জন্য—
মৃত্যুর অর্থ কি কেউ বুঝে উঠতে পারে?
ব্যাখ্যা করো কেমন করে পাহাড়গুলো নিঃশ্বাস চুরি করেছিল,
বা অনুবাদ করবে সেই অন্ধকারকে
যা নেমে এসেছে?
কে বলতে পারে কী বিকশিত হয়
একটা শিশুর স্বপ্নে ?
একটা প্রাচীন গল্প থেকে ঝাপটাতে ঝাপটাতে,
পাখিদের ডানাগুলো কাবু করে ফেলে
আমাকে—এবং চামড়া
যা পাথরের মত ভারী
যেমনটা বলতেন বৃদ্ধা রমণী।
যখন অন্ধকার নেমে আসে
পাহাড়ের ওপারে,
আমি স্মরণ করি যে মানুষদের, ব্যথাতুর চোখে তারা
আমাকে দেখে।আমার শব্দ শোকগাথা।
যদি এটি বিলাপ হয়,
আমরা এখনো
কান্না শুরু করিনি।
কবি পরিচিতি
বেজান মাতুর (Bejan Matur b.1968) বর্তমান সময়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে কবিতায় যে নতুন ধারার দীপ্ত ও বলিষ্ঠ মহিলা কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে বেজান মাতুর তাদের মধ্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। তুরস্কের দক্ষিন-পূর্বে মারাশ-এ এক কুর্দিশ আলেভি পরিবারে তিনি জন্ম নেন। আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাশ করেন কিন্তু কোনোদিন প্র্যাকটিশ করেননি।
তার প্রথম বই Winds Howl Through the Mansions (1996)। যে বইটি ছিল সমসাময়িক তুর্কি কবিতার মূল ধারা থেকে স্বতন্ত্র। তা সমালোচকদের নজর কাড়ে এবং অনেকগুলি পুরস্কার পায়। তার আরো চারটি কবিতার বই আছে : God Must Not See the Letter of My Script (1999), The Sons Reared by the Moon (2002), In his Desert, also (2002), How Abraham Abandoned Me (2008)। তার কবিতা তার নিজের গোষ্ঠীর মানুষদের লড়াই, সংগ্রামের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তথাপি তার কবিতায় রয়েছে এক অতীন্দ্রিয় স্বর, প্রকৃতির সঙ্গে নৈকট্য, পুরাণের সঙ্গে নিবিড় যোগ ও ঈশ্বরের সঙ্গে সংলাপ। ফরাসি, স্প্যানিশ, চাইনিজ সহ আটাশটি ভাষায় তার কবিতা অনূদিত হয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০০১২, তিনি তুরস্কের প্রধান সংবাদপত্রগুলিতে কলাম লিখেছেন। সেগুলির বিষয় ছিল : কুর্দিশ রাজনীতি, আর্মেনিয়ানদের সমস্যা, দৈনন্দিন রাজনীতি, জেলখানার সাহিত্য, নারীকেন্দ্রিক বিষয়সমূহ। বর্তমানে তিনি লন্ডনে বসবাস করেন এবং ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেস ইন্সটিটিউট-এ কুর্দিশ বিষয়ে একজন পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত।
One comment on “বেজান মাতুর”
sucharita Chakraborty
সুন্দর অনুবাদ