ছলনা
চেয়েছি বলেই বোধহয় ফিরিয়ে দিয়েছ
না চাইলে হয়তো বা ফেরাতে না
ধ্বনির কোরাসে তুমি লিখিত হয়ো না
লেখার থেকেও মিথ্যে ধ্বনির ছলনা
এ আকুল গরদ বিষাদ
না জানি কে সন্ধেবাতি নিয়ে এল
এমন মুখর ধ্বনি তুমি কার দোরে দোরে জল ঢালো
ভিজেছে মাথুর বেলা, কুড়িয়েছ শঙ্খধ্বনি
কে তবে বিপুল ভারে অনুনয়ে নুয়ে পড়ে
আসিও অবাধ্য ধ্বনি, পিছনে তাকিও না লেখা
লেখার থেকেও মিথ্যে তোমার পিছন ফিরে দেখা
তোমার এ অবেলা-শরীর একটা মস্ত গ্রন্থাগার
বিক্রি হবে না জেনেও তাকিয়ে আছ
তবুও তো এ তাকানো তোমাকে ফেরত দিতে পারছি না
স্বর্গ
সেভাবে ভাবিনি, স্বর্গ বলতে সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়াটুকু শুধু লিখে রেখেছি দেয়ালে। এই লেখার উপর যে টিকটিকিটা আরশোলার পা ধরে টানাটানি করে তাকে বুঝিয়েছি, অক্ষমতা এমনই এক উভচর প্রাণী, যাকে নির্বাহ করতে নেই। অথচ, যেটুকু নেমে আসা ভেবে যারা উঠে গেল সিঁড়ি বেয়ে, তাদের মুখে শুনেছি, স্বর্গ বলতে অর্জনের শেষ সীমানা। তাহলে তো সীমানাও একটা অক্ষম প্রাণী, যাকে টপকে আর একটা সক্ষমতার দারস্থ হতে হয়। আসলে এই যে ওঠা নামার ভিতর একটা জীবন জায়গা করে নিতে পারছে না নিজে, এই যে ছিনিয়ে নিতে না পারা জায়গাটা, এটাকেই স্বর্গ বলতে শুনেছি ঈশ্বর মরে যাওয়ার পর।
অন্যদিনের ভাগ
এমনো তো হয়, দেখা হওয়ার দিনেও কলম ভাঙে
যেটুকু কালির দাগ মনে থেকে যায় অন্যদিনে
তার থেকে ভাগ চাইবে, বলো ? সে কি কেউ নিতে পারে !
অথচ, শরৎ এল, কাদা মাটি পুড়ে দেবী হল
মাটির সাথে মিশে কথা হল, কী কথা তাহার সাথে ?
মনে পড়ে না এখন । তুমিও পুরাণ হলে ! সেও
আমাকে তদন্তে ভরে নিয়ে চলল যুদ্ধের কাশবনে
আমি যে সারথি নয়, তবুও আমাকে সে পার্থিব
ভাবে কী করে ! এ সংবরণ আমাকে দিও না, দেখা
আমি পলায়নবাদী, ঈশ্বরের মাথা নিয়ে খেলা করি
খেলতে খেলতে পাহাড় গড়ি, লুকোতে লুকোতে
নিজেদের…
এ তো তবে দেখা নয় । দূর থেকে বদলা নেওয়া জল
এটুকু মিশিও না, কলম । কলমের ডগা ভেঙে
দ্যাখো, নীচে কার দেহ ভেসে যাচ্ছে কালিতে কালিতে…
নতুন জামা
বিনীত ইতির নীচে
যার হারিয়েছে নাম
অহংকারের অভাব নেই তার
অথবা, খোঁজের দায়ে সুতো বেচে যারা একা একা বসে থাকে ছাদে
তাদের তো মন নেই, তাদেরও তো জ্বর আছে
ঠিকানা এমনই এক বিশ্বাসঘাতক উৎসব,তাকে জেনে গেলে ভিড়ে, তোমার নতুন জামাও ওষুধের খামের মতো দেখতে লাগে
দু’বেলা দু’টো
সকালে খাবার পর, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে…
পাথর
এভাবে হয় না । খেয়ালেরও তো উদগান্ডু হতে শখ জাগে
উপমা পেরিয়ে দ্যাখো, একটা নেংটো ছেলে জল তুলছে
কুয়ো থেকে । বালতি ভর্তি ফেনা, স্নান শেষে গামছা গায়ে
হাতপাখা নিয়ে মৃত শালগ্রাম শিলা ঠান্ডা করছে
অথচ পাশেই বকুলতলা, চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে
দৈববাণী আসতে পারে, কেউ ভিজে কাপড়ে পুকুর
থেকে উঠে এসে জল ঢেলে যাবে শিবলিঙ্গে, নয়তো
গাছের গোড়ায় শিলালিপি হয়ে থেকে যাবে ঠাকুরদা
এভাবে হয় না । পুংজন্মের গোরা, ডালপালা নাতনি
তাকে কেটে নিয়ে যাবে, সেও বড় হবে ধীরে ধীরে
তার নীচে একটা নেংটো ছেলে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকবে
পুংলিঙ্গ ভেদে ভিন্ন জলের উপমা, নয়তো ঠাকুরমা
জল ও বাতাসা নিয়ে গাছের গোড়ায় রেখে যাবে
সন্তুষ্ট এমনই এক পুজো, তাকে পাথর করতে নেই
Leave a reply