আশীর্বাদ
প্রতি রাতে
এই কর্দমাক্ত জলে
সে ধুয়ে ফেলে বন্দুক যা সে ব্যবহার করবে
ঠিক পরের দিন নিজেকে হত্যা করার জন্য।
সবুজ পণ্ডদল, ভারী বাতাস ঘেরা
বাঁচিয়ে তোলে পুনরায় রীতি-প্রথা আবর্জনার
ছত্রাকাবৃত পদক্ষেপে
অসাড় অহংকার, পুনরায় ধরবার জন্য তাকে
ন্যাড়া মাথার ওপর টুপির নীচে।
পূর্বশর্ত: নিজেকে অন্যের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলোনা!
আশীর্বাদ এই বন্দুক হাতে হাতে
এই ছোট্ট পরিসর
পিতা থেকে পুত্রে
এই অন্ত্র-হ্রদে
অপচয়ের পাখি
অনেকে
ভিক্ষা করে তাদের ক্ষতগুলো দেখিয়ে
নিজেদের তোলা ফটোগ্রাফ নিয়ে
বিস্মৃতির দেয়ালের কাছে
বাকিদের ক্ষেত্রে
স্মৃতির পুরানো উষ্ণতায়
তারা লুকিয়ে রাখে তাদের ক্ষতস্থানগুলো
কোন উচ্চারণ বা প্রদর্শনী ছাড়াই
প্রমাণ-নিদর্শন অনেকটা সময় অনেক সময় নেয়;
তাদের শরীর ও মন খুলে যায়
যখন তারা খুঁজে পায় বোমারুর
সর্বসময়ের বোমারু
ঘাতক চুম্বনসহ
আমি ও আমার পাখি
আমি আর আমার পাখি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন
আয়নায় প্রতিবিম্বিত, আমাদের খাঁচা আমাদের বিছানা
আমাদের মুখগুলো একে অন্যকে প্রতিবিম্বিত করে
আমরা ঘুমায় চিরকালীন পতনশীল বরফের নীচে
আমি আর আমার পাখি।
একটা গাঢ় লাল ফিতে আমাদের বাঁধে আমার বন্ধু আর আমাকে
দূরপনেয় অবিচ্ছেদ্যতায়।
দারিদ্র্যও আনন্দ তার চরমতায়।
এই সম্পর্কের বাইরে আমাদের আয়নার ভেতর ছিল শূন্যতা…
এই গাঢ় লাল বন্ধন আমাদের ভেতরে… আমার বন্ধু আমার পাখি আর আমি
হারানো বসন্ত
ভুলে যাওয়াকে বসন্ত বলে ডাকা উচিত
প্রতিটি মুহূর্তের কাছে ‘নতুন’-কে পাঠানো
আমি তোমার কাছে
তুমি আমার কাছে তেমনই।
দেখছি খুব দেরি হয়ে গেছে, হনন খুবই কাছেই!
আমি জানি এখন তোমার উচ্ছ্বাস-দূরত্ব
তুমি গ্রহণ করছো না আমার মুখ
এমনকি নিজের চোখেও না!
সত্য জানা যাবে, আমরা আকুতি করছি
সোজা, তির্যক, বিপরীত অথবা বৃত্তাকার।
হৃদয়ের জায়মানতা সুন্দর
তোমার জানা উচিত আমিও ভালবাসতে পারি!
কবি পরিচয়
নিলগুন মারমারা (Nilgun Marmara, 1958-1987) অকালপ্রয়াত তুর্কি কবি প্রতিভা। তাঁর জন্ম তুর্কিস্থানের ইস্তানবুলে। বিদ্যায়তনিক ক্ষেত্রে প্রথমে পড়াশোনা করেন তুর্কি সাহিত্য। পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে তিনি পাঠ নেন ইংরেজি সাহিত্যের। আমেরিকান কবি সিলভিয়া প্লাথে (Sylvia Plath, 1932-63)-র কবিতার ওপর তিনি লিখেছেন তাঁর গবেষণা সন্দর্ভ। প্লাথের কবিতা ও জীবনের সঙ্গে খুব মিল পাওয়া যায় মারমারা-র কবিতা ও জীবনের। প্লাথের কবিতার গভীর বিষাদ ও মৃত্যু আকাঙ্ক্ষা গ্রাস করে এই তরুণ কবিকে। তাঁর গবেষণা সন্দর্ভে তিনি খুব জোরের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন যে আত্মহত্যা প্রবণতা প্লাথের ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা নয় বরং তার শক্তির জাযগা। এই বোধ ক্রমশ তাঁর সমগ্র মনন ও ব্যক্তিত্বকে সম্পূর্ণভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলে। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে ১৩ অক্টোবর বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। প্লাথের কবিতায় যেমন, নিলগুন-এর কবিতাতেও মৃত্যু অমনিপ্রেসেন্ট। মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় তাঁর কাব্যগ্রন্থ ও অন্যান্য লেখা। এগুলো হল:
Typewritten Poems, 1988
Texts, 1990
Red Brown Notebook, 1993
An Analysis of Sylvia Plath’s Poetry in the Context of Her Suicide, 2006
Notebooks, 2016
Papers, 2016
অকাল প্রয়াত এই কবির সৃজনশীল জীবনের পরিসর খুবই সীমিত। কিন্তু খুবই শক্তিশালী এবং স্বতন্ত্র তাঁর কবিতা। তাঁর কবিতায় সাধারণ শব্দকে তিনি বিশেষ ব্যঞ্জনায় ব্যবহার করে তাদের অর্থে নতুন মাত্রা যোগ করতে পেরেছেন। নিলগুনের কবিতার অন্তর্জগৎ বাইরের বাস্তবতার দ্বারা প্রভাবিত নয়, তার বাস্তবতা তাঁর মনোবিকলন উদ্ভাবিত। তুর্কি ভাষার নতুন প্রজন্মের কবিদের ওপর মারমারা-র প্রভাব গভীর।
Leave a reply