সাংসারিক
১
যেমন সহজ মৃত্যু, অনন্তশীল অন্ত-পার। এর পর একা বেয়ে যাবে দাঁড়
মাঝি। সে-ও সহজ, ঢেউয়ের শব্দমাত্র গুণে সময়ের কাল বুঝে নেয়।
যেমন একাকী প্রেম কালো মেয়ের শরীরে। কোথাও শরীরখানি বড়ো —
রক্ত-মাংস-মেদ। হৃদয়ের ভার আসে চতুর্দোলায়; সঙ্গী তার
ভয়মাত্র। এভাবেই অগ্নিসাক্ষী, জঠরসম্ভবা সন্তান ও সুখী গৃহকোণ।
প্রতিটি রেখা যাত্রার পূর্বে একটিমাত্র কোণ
সুনিশ্চিত :
গল্প এরপর
অন্য পথে বাঁক নেয়, বিধেয়সুলভ
২
আমাদের কথা গোপনের রীতি — ঈশ্বরী, জীবন বড় সহজ নয় হে;
যেন পা পিছলে গেল এইমাত্র এবং দোষ হল মূকবর্ণ খাদের। কেন
ঊর্ধ্বে উঠে অন্ধ হলে ভাবি, নয় প্রতি রাত্রেই মরণ যেমন সহজ ঘুমে
ভোর জাগায়, ঘর পেরিয়ে বাইরে এসে গন্ধ নিয়ে খোলা হাওয়ায় দেখি
একলা চুল আড়াল করে ঘুমন্ত চোখ। সেইটুকু প্রেম। এত সহজ,
হাতে নিলেই ভেঙে যাবে। সেসব কথা ভুলেও বলি না আর। রাত
তোমার পাশে সহজ যেমন, গোপন যেমন মাংসলোভী চোখ —
শঙ্খ লাগা, চাঁদের গায়ে
আমার তোমার দিন কেটে যায় বলার কথায়, শোনার কথায়;
বিসর্জনের বাজনা হঠাৎ চুপ ভেঙে দেয় একার ভিতর। শব্দ ওঠে, জলে পড়ার
শব্দ ওঠে, হাওয়া ধরার ইচ্ছে নিয়ে হঠাৎ যেমন হারিয়ে যাওয়ার গোপন
আমার পাশে ঘুমায়, তোমার পাশে…
৩
সোহাগ ভালো, স্বস্তি ভালো
দাগ ভালো, সফেদ ভালো; আলো —
অন্ধকার ভালো যখন বুকের খাঁজে
গভীর দাগের ফাগুন জমে। জ্বলে।
জ্বলতে জ্বলতে গলে। প্রতিদিনের
জন্মদিন। দীন-জন্ম পেরিয়ে যেতে
একটিমাত্র তারার নীচে জড়ো হওয়া
সঙ্গসুখ অঙ্গে রং ধরিয়ে দিলে
স্বভাবসুলভ দুঃখবিলাস — আশে
বাঁধা জীবন যেমন বিহানবেলার,
আলো ধুয়ে জমাট হওয়া চারদেওয়ালের
অচিন বেহাগ
তেমন করে জন্ম হলে,
সকালজনম
মেঘ ভেজানো সূর্য গলে ছড়িয়ে পড়ুক…
৪
রাস্তা ঘরের ভিতর, নাকি ঘর একার ভিতর ঘুরে মরে
দিনশেষে এসব কথাই বড় বেশী ব্যক্ত হয়। ডাক দিয়ে
উড়ে যাওয়া চিল শব্দে অন্ধ রাখে না, শুধু মায়া।
একমাত্র মায়া যেমন মনকেমনের দোর ঘেঁষে চৌকাঠে
মাথা ঠুকে চলা রাধা কেন প্রেম-বিবাগী হয় তার খতিয়ান —
হিসেবের খাতা, ময়ূরীবিলাপ, এসবই
বিকেলের দাগ। রাস্তা থেকে ঘরে আসে,
ঘর থেকে রাস্তায় আল্পনা এঁকে যাওয়া কোজাগরী
রাত কাটে, ক্ষণ; কে আসে? আশাদাগ মুছে এলে
বিসর্জন বাঁশি একা, যেন
ঘর ফেলে চলে যাবে বলে, শুদ্ধা
সিঁদুর ক্লান্ত হয়, মঙ্গলঘটে
৫
সে কথা তাদের কথা, তাহাদের
সব কথা মেঘে মেঘে কালবেলা বয়ে
ছায়া ফেলে ডুবে গেলো পোড়া গঙ্গায়
মড়া খুঁটে খাওয়া খুঁতো কাক গিয়ে বসে
কথাদের এপাড়া-অপারা ছড়িয়ে বাকি কিছু
বর্ষার ইলিশের তেলে মেখে নিলো।
এমন দিনে যারে বলা যেত কাল
আজ তার মুখে বিষ্ণুরোম তৎসৎ-অদ্য, তৃপ্যতামেতৎ
তৃপ্তি-ঘর শরৎসূর্যে জ্বলে
জ্বলে,
শান্ত হয়।
Leave a reply