রাজা
মাথায় শনপাপড়ির মতো চুল
গায়ে ফুটোফাটা আলখাল্লা
লোকটাকে দেখা যায় হাজরার মোড়ে
কালীঘাটের চাতালে
ভিক্টোরিয়ায়, ঘোড়াগুলোর সাথে খুনসুটি করে
হঠাৎ হেসে ওঠে, কাঁদতে-কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে
কখনো হাওড়াব্রিজের রেলিং ধরে চিৎকার করে ‘সব ঝুট হ্যায়’
অনেকে তাকে ‘কোলকাতার রাজা’ বলে উপহাস করে
সে
সে রাতে কোথায়
কে যেন তোমায় নিয়ে গেল
নিয়ে গেল কেড়ে
এবার কে আমায় রোজ-রোজ
বলো,
দেবে ভাত বেড়ে
শৈল শহরের রাত্রি
প্রবল ঠান্ডা
সারা শরীর কাঁপছে ঠকঠক করে
দেশলাই নেই, মোমবাতি নেই
রুমহিটার নেই
ফায়ারপ্লেসও স্তব্ধ
অবশেষে তুমি এলে…
যে পাড়ায় লেডিস হোস্টেল আছে
নারকেল গাছে বেয়ে ওঠা কাঠবেড়ালির গায়ে লেগে থাকে বিকেলের আলো
হাওয়ার মাদক
বুনোফুলে পরাগের ভার
ছুঁয়ে যায় মাটির প্রলেপ
অজানা ছায়াবাজি শালের জঙ্গলে তরঙ্গ সাজায়
কোনো এক পথহারা পথিকের পায়ের পাতায় আবেশ জড়ায়
তারও বুকেতে মেঘ নামে
চেনা ডাকনামে তাকেও ডেকে যায় কেউ
এ পাড়ায় রঙচটা পুরনো লেডিস হোস্টেল
এমন বিকেলে তার ছাদে রূপকথা জন্মায়…
রাদারফোর্ড
আজ আমার ঠাকুমার মৃত্যু-দিন
এন আই স্যারের ক্লাসে সকলে খুব মনোযোগী
স্যার রাদারফোর্ড বোঝাচ্ছেন
আমার মন নেই
আমি যেন ঠাকুমার হাতের রান্নার গন্ধ পাচ্ছি
আঃ কী স্বাদ
অন্যরাও কি পাচ্ছে?
জানি না
আমার প্রিয় ঠাকুমা ব্ল্যাকবোর্ডে এঁকে এঁকে মোচার ঘন্ট বোঝাছেন
আমি শুধু হাঁ করে দেখছি কপালে তিলক-আঁকা বৃদ্ধার মুখ
আমাকে ক্ষমা করবেন মাননীয় রাদারফোর্ড
রিনাবৌদি
রিনাবৌদিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না
রজকিনী
বাড়ি বাড়ি নিয়ে যেত জামা-কাপড়
দু’দন্ড গল্প করতো বসে
হরিণের মতো চোখে ঘুরে বেড়াতো মায়া
কালো শরীরে চকচক করতো বিন্দু ঘাম
রিনাবৌদিকে পাওয়া যাচ্ছে না
গতকাল এসেছিল সন্ধেবেলায়
যাওয়ার সময় বলেগেছিল,
আমি আর কতদিন!
এবার একটা বিয়ে করো ঠাকুরপো
শহর জুড়ে বিষন্নতা
ভেঙে-পড়া শহরের মাঝখানে ঝুলে থাকে আলো
নিভুনিভু বাতিঘর
খোলা বারান্দায় অজস্র কাক-শালিক
কোনো এক পার্কের বেঞ্চিতে পড়ে থাকা নোনতা রুমালে চেনা আদ্যক্ষর
তবুও বিষন্নতার জলছবি শহর জুড়ে
ভবঘুরে রাস্তার ধুলো
এখানে ওখানে কলঙ্কছাপ, দেওয়াল-লিখন
চেনা উড়ালপুলে গরম নামে
প্রিয় গাছেদের শরীর ভিজে যায় ঘামে
এরপরও শুনতে পাই হাসির শব্দ
যখন গাড়ি এসে থামে অ্যাসাইলামে
যা কিছু পাওয়া
এই যে তোমার হাত ধরা
হাত ধরে কয়েক পা এগিয়ে যাওয়া
এগোতে এগোতে কখন যে হাত ছেড়ে দিলে
ঠেলে দিলে মহাশূন্যে
আমি শুধু দেখছি
আমার দিকে তাকিয়ে সবাই হাসছে
বিদ্রুপ করছে
আর আমি বনবন করে ঘুরতে ঘুরতে ঝাঁপিয়ে পড়েছি এক দেয়ালের গায়ে
দেয়ালে ঠেকে গেছে পিঠ
আর পিঠে শুধু লেগে আছে ভালোবাসার ক্ষত
অবিনশ্বর
সবই তো পাওয়া হয়ে গেল এ জীবনে, হায় ঈশ্বর!
যে-মেয়েরা হারিয়ে যায়
ওই যে বাঁকা গলি
তার পাশে একটা পড়ে থাকা পরিত্যক্ত কারখানা
ঠিক ওখান থেকে হারিয়ে গিয়েছে মেয়েটি
কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথ
ট্রেন লেট ছিল
ফাঁকা রাস্তা, চাঁদ ছিল না, রাত্রি নিঝুম
পুলিশের ডায়রিতে বয়স ছাব্বিশ
শ্যামলা রঙ, পরনে শাড়ি কচিকলাপাতা
ঠোঁটের পাশে ছোট তিল
আর ওর একটা আদুরে ডাকনাম ছিল
সিনেমা
অনেকটা পথের পাঁচালীর মতো দৃশ্য
একটা নিস্তব্ধ পুকুরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কয়েকটা ছেলে-মেয়ে
পিছনে পিছনে একটা কুকুর, দৌড়চ্ছে
তাদের ছায়া জলের গভীরে
আমার জানালা দিয়ে এটুকুই দেখা যায়
সত্তর মি.মি স্ক্রিন, এর বেশি কোন দৃশ্য নেই
কোন চরিত্র নেই
অনেক দূরে একটা পাখি ঠোঁটে করে কী একটা নিয়ে যাচ্ছে
সুখ? না স্বপ্ন?
সিনেমা শেষ হয়ে আসছে
এ জন্মে আর জানা হবে না!
Leave a reply