অন্ধগর্ভ
প্রতিপক্ষ যুযুধান ভববৃন্তে পুষ্প সমাহার
আজ্ঞাচক্রে অবরোধ যন্ত্রজন্মে অভ্যস্ত তাগিদ,
দ্বি-দল নীলোৎপল কক্ষে শুধু কীটের বিহার
ঈশাবাস্যে আস্থাহীন অনুবীক্ষ্য স্থানু ব্রহ্মবিদ্!
অবধ্য অস্তিত্ব জুড়ে বীজাণুর ক্রমিক সংক্রাম
অসূয়াতাড়িত সুখে রিপুরূপে বহতা রুধির।
মর্মঘাতী ঘূর্ণিপাকে মন্থজাত স্বতোসিদ্ধ কাম
ধূমায়িত পুষ্পশর তমসায় হয়ে থাকে স্থির।
লোভনীয় মৃগয়ায় ফাঁদে পড়া কুরঙ্গের ঘ্রাণে,
রসনায় রসাতল বাসনার সৌরহীন টান।
আমোদিত চিত্ত ধায় মেরুদেশে খনিজ সন্ধানে
অন্তহীন লোভানল, দাবানলে শিখা লেলিহান।
অনিবার্য জন্মস্রোত ব্যর্থ আবাহন বহমান
বিশুদ্ধতা তিলোত্তমা মেধাবিনী প্রতিভার দান।
কবন্ধকাল
সুধাপাত্র অপনীত গরলে প্রাণের পরিচয়,
অমৃতপিয়াসী জন কবন্ধ কেতুর সমতুল।
অথবা দানব পুত্র বজ্রাঘাতে সদা মুণ্ডক্ষয়
মৃত্যুরূপ মুক্তিস্বপ্ন রাম রাজ্যে নয় অপ্রতুল।
উদরসর্বস্ব আত্মা পঞ্চ অঙ্গে তৃপ্ত অনুক্ষণ—
অশনি উপেক্ষা করে বেঁচে থাকা নিয়ত অভ্যাস।
প্রত্যহ সন্দেশ ছাঁদে মধুময় তার বিবরণ,
গরিষ্ঠের সমর্থন গণতন্ত্রে তুরুপের তাস।
জনাদেশ শিরোধার্য, ছিন্নমস্ত ধড়ের প্রলাপ
সেহেতু নিযুত রথে ঝাঁটিপুচ্ছ ধূমের সঞ্চার।
কুণ্ডলিনী নিদ্রামগ্ন সপ্ত গ্রহে সুপ্ত কালসাপ
অনিবার্য ব্রহ্মশিরে স্কন্ধহীন নৃত্য সমাচার।
কৃপাজন্ম পরীক্ষিত, দৈবলব্ধ বৈধ সম্মতি
ভূমিপ্রাপ্তি শর্তাপেক্ষ মৃত্যুপ্রাপ্তি প্রথম নিয়তি।
দ্বিতীয় নিয়তি
বটবৃক্ষ বহ্নিমান মৃত্যুভীত স্তব্ধ অরণ্যানী,
কৃপাবর্ষী সমাধান ইমারত স্বপ্নে প্রতিকূল।
স্থিরলক্ষ্য মগজের বিচারে হয় না কোন ভুল
দগ্ধপ্রাণ টিঁকে গেলে আছে সান্ত্বনার পুণ্যবাণী।
অগত্যা ডুণ্ডুভরূপে বেঁচে থাকা পুণ্যকর্ম মানি
কীটদষ্ট অস্থিমজ্জা নীতিবাক্যে আস্থাশীল শ্রুতি
মনোরাজ্যে সমাধান, শব্দব্রহ্মে বিলীন দু্র্গতি;
অতএব মৌনব্রতে জীবনের জয় হবে জানি।
বিরলে তক্ষকরূপী প্রতিশোধ জমে দিন দিন
ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে রাজগৃহে তার অনুচর।
ধর্ম অর্থ কামে তৃপ্ত গৃহমুখী যত বিষহর—
ফলাহারে কৃষ্ণআঁখি তাম্রবর্ণ কীটেরা আসীন।
শৃঙ্গীবাক্য সত্য হোক রুধিরবাহিত অনাচার—
গরলে বিশুদ্ধ হোক, লয় হোক ধরিত্রীর ভার।
স্যমন্তক
বাসনার আয়ুবৃত্তে সৌরকক্ষে সদা প্রদক্ষিণ
শরণে বিষয়জ্ঞান, স্মরণে রিপুর আবাহন।
রুধিরে গরলস্রোত অশ্বিনী অসাধ্য প্রক্ষালন
স্পৃহাময় নিরালোকে অন্ধ মানবতা অন্তরীণ।
পক্ষপাতী মতামত বায়সের অযাচিত রব,
জীবান্তক শ্যেনদৃষ্টি, শৃগালের অধর লেহন
অসূয়াতাড়িত সুখ অশুভের নিত্য উদ্বোধন,
অতল কালের গর্ভে মর্মঘাতী মুষলপ্রসব।
তমসার তীর ছিল সৌরদত্ত মণিতে উজ্জ্বল
চাকচিক্যে চিত্তহরা মদের সহাস্য প্রতিদান,
বিথরে বিথরে দৃশ্য ক্রয়যোগ্য ভোগ্য উপাদান
উজাড় করেছে প্রাণ, নিয়ে গেছে প্রেমের সম্বল।
অবক্ষয়ী আত্মঘাতী বিদ্বেষে আসন্ন পরাভব
মানবতা বেঁচে নেই, বেঁচে আছে মানুষের শব।
ধূলিজন্ম
সদাত্রস্ত যক্ষরূপী অচেতন অন্ধকারে লীন
ভূতগ্রস্ত ইতিহাস। সর্বব্যাপ্ত মৃত্যু হাহাকার
কর্মমন্থে মহামারী নেই নীলকণ্ঠ প্রতিকার,
সহস্র সংকটমধ্যে দিগম্বর ধ্যানে সমাসীন।
মধ্যরাতে অট্টহাসি, প্রলুব্ধের শুণ্ড আস্ফালন
প্রেতের কবন্ধনৃত্য, তনু ছিন্ন কামীর নখরে
মদদর্পী দন্তাঘাতে রক্তরেখা প্রসূন অধরে
নির্বিকার মহাবীর। সদাহাস্য প্রসন্ন আনন।
অবলুপ্ত আত্মচিন্তা অরিহন্ত জ্ঞানের উদয়;
উপেক্ষিত নয় সেথা করীনিম্নে শশকের প্রাণ।
সর্বভূতে আত্মজ্ঞান প্রজ্ঞালব্ধ আলোর প্রমাণ—
তিতিক্ষার মহামন্ত্রে সমূহ তমসা হবে ক্ষয়।
রিপুজয় সাধ্যবস্তু, দেবত্বের স্বর্গসুধা নয়
অমৃতের অনুভবে এ মর্ত্যেই সাধ্য তমোজয়।
Leave a reply