আমেরিকান কবি মার্ক স্ট্র্যাণ্ড সম্পাদক, অনুবাদক ও গদ্যকার হিসেবেও সুপরিচিত। তাঁর লেখার শৈলীর মধ্যে বিশেষভাবে নির্দেশ করা যায় তার সংক্ষিপ্ত ভাষাভঙ্গী এবং সুররিয়ালিস্টিক ইমেজের ব্যবহার। কবিতার জন্য একাধিকবার পুরস্কারে সম্মানিত হন এবং ১৯৯৯ সালে ‘পুলিৎজার পুরস্কার’ পান, তাঁর কবিতার বই ‘ব্লিজার্ড অফ ওয়ান’-এর জন্য।
ধারণা
(নোলান মিলারের জন্য)
এমন কিছু অধিকার করার ইচ্ছে ছিলো
যা আমার কিংবা বিশ্বের কল্পনার অতীত
যার ভেতরে আমরা আমাদের দেখতে পাবো
এমন ইচ্ছে আলো ভেঙ্গে, উপত্যকার লেকের বরফ
ভেঙ্গে, অতীতের দৃশ্য পার করে বয়ে যাচ্ছিল।
ইচ্ছেরা কষ্ট পাচ্ছিলো, আগের মতো ছিলো না
ছায়া ছায়া সাদা মিথ্যে লুকোনো বক্রতার মতো
আশ্বাস দিচ্ছিলো যেন আমরা কাছাকাছি,
যতক্ষণ না রাতের বাতাস ওদের ফিরে
যেতে বলছিলো
এবং তারা এলো, কেবিনের জানালায়
বরফের উপস্থিতি সত্ত্বেও চকচক করছিলো।
আমরা তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম
স্তম্ভিত আমরা এগিয়ে দরজা
খুললাম, তারা এলো।
আমাদের হয়েও আমাদের ছিলোনা যারা তারাই আমাদের ধারণা।
প্রকৃতই
যা চেয়েছিলাম তা করেছি আমরা।
স্বপ্ন বাতিল করেছি একে অপরের কথা ভেবে
বেছে নিয়েছি দুঃখ, ধ্বংস আর
অপরিবর্তনীয় কোন কোন অভ্যাস
আর এখন, নৈশভোজ প্রস্তুত অথচ
আমরা খাচ্ছি না।
সাদা পাত্রে মাংস, ওয়াইন –
অপেক্ষা করছে।
আসলে, কিছুই দেওয়াও হয়নি, কেড়ে নেওয়াও হয়নি
আমাদের কোন হৃদয় নেই, সৌন্দর্যও।
আমাদের কোথাও যাবার জায়গা নেই,
থেকে যাওয়ার কারণও নেই।
কালো সমুদ্র
কোন এক স্পষ্ট রাতে সকলে ঘুমোলে
ছাদের সিঁড়ি বেয়ে আকাশের সমুদ্রে পৌঁছলাম
বাতাসের শিখা রাতের জরি আর
আমার দীর্ঘ অপেক্ষা দূরের
আলোর জন্য।
আমি কল্পনা করছিলাম তুমি কাছে আসছো
তোমার চুলের ঢেউ, গাঢ়তর ইচ্ছা আর
ক্রম আসন্ন আলো –
নৈকট্য, তোমার উষ্ণতা, অথচ আমি
দাঁড়িয়েছিলাম একাকীত্বের উচ্চতায়।
কাচের মতো ভেঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছিল ঢেউরা।
তুমি আসবেনা তবু মনে হয়েছিল আসবে।
শব্দরা বলেছিলো আমি অপেক্ষায় ছিলাম বলেই।
কেন বলেছিলো!
উদযাপনে
চেয়ারে বসো, কিছু ছুঁয়োনা, অনুভব করো
কল্পনা করো তোমার ভেতরের বৃদ্ধটা
আরো একটু বৃদ্ধ হলো
জলের ধৈর্য্যের মতো, পাথরের উদাসীনতার মতো।
নীরবতা সেখানে খাতার অতিরিক্ত পাতা।
ভালো-মন্দের বাছাই না করে
ঘরের অতিরিক্ত অন্ধকার বসে উপভোগ করো।
এ সব আগেও ঘটেছে, এমন ঘটেই।
দুখী বন্ধুরা জানলার পাশ দিয়ে যায়
তাদের দিকে হাত নাড়াতে চাইলে
তুমি হাত তুলতেও পারো না।
চেয়ারে বসে রাতের বাতিদানের জাল সরাতে
সরাতে তুমি স্বাদ নাও যা নেই তার
তোমার স্বর কিংবা দেহ যাই আগে নষ্ট হবে
সেসবের আগে তুমি জানো, ইচ্ছের পরিণতি দুঃখ
অথবা শূন্যতা। পৃথক হলেও, এসবই উদযাপন,
নিজেকে নিঃশেষিত করে। ক্রমাগত সুস্থ হলে
তুমি ফিরে যাবে ফুসফুসীয় বাতাসে, অপেক্ষা করবে
ধুলোর জন্য আর শৈশবের বিস্ময়ের অন্ধকারের জন্য।
সমগ্ৰতাকে রেখে
যেকোন ক্ষেত্রে আমি শূন্যতাকে ভরাট করিমাত্র
সবসময় এমনটাই ঘটে।
যখন আমি হাঁটি, বাতাসকে ভেদ করে যাই
আমার ফেলে আসা শূন্যস্থানে থাকে বাতাস
আমাদের সকলের যাত্রার উদ্দেশ্য রয়েছে
আমার উদ্দেশ্য সমগ্ৰতাকে সম্পূর্ণ করা।
ভাষান্তর মৌমিতা পাল
Leave a reply