নদী
নদীর কথা ভাবলেই আমার চোখে তোমার গালের শিরাটা ফুটে ওঠে
কী অসম্ভব বাঁশির মোহন
কী অসম্ভব বয়ে যাওয়া !
ফুলেল স্রোতে টালমাটাল নৌকা !
আযৌবন দোল খাওয়াচ্ছে আমাকে —
জীবনমরণ
ছবি
নারকেলপাতার কারু-আশ্চর্যে চমকে যায় ডাহুক।
কেমন রোদকে ফালাফালা করে ফেলে অবিশ্বাস্য কাঁচি দিয়ে ;
ভগ্নাংশ কুড়িয়ে আঁকে কিতকিত খেলার ঘর।
মা ডাহুক নারকেলের মোচায় শস্যযত্ন জমাতে জমাতে দেখে
অবিকল বাড়িওয়ালার সংসারচিত্র এঁকে চলেছে গাছ —
কাঁচিতুলির শিল্পী চোখ দিয়ে
ফেরিওয়ালা
বাড়ি বাড়ি বাসন ফেরি করে বেড়ায় যে লোকটা,
যাবতীয় গৃহিণীকুল তাকে খোঁপায় জমিয়ে রাখা অসম্ভব সমুদ্র
উপহার দিয়েছে। কালো সমুদ্র!
দিয়েছে সমুদ্রের ফেনা বেয়ে গড়িয়ে আসা গন্ধতেলের আমেজ —
বাড়ি বাড়ি বাসন ফেরি করে বেড়ায় যে লোকটা
পোঁটলা বেঁধে গৃহিণীকুলকে সে আস্ত দুপুর বেচে আসে
সখী
মাটি বলে কলসীকে উপেক্ষা ছুঁড়ে দিয়ে রোদের রঙ ধরতে ছুটেছিল যারা
তারা সবাই একদিন,
ঠিক একদিন
কলসীর গলার প্রিয়সখী হয়ে ওঠে
গাছ
*
ওই শস্যময়তা কি ভরে তুলেছে গাছের নিজস্ব কোনো পেট?
নধর দুলুনি শরীরে জড়ানো আছে
চাঁদের রুটির আরাম?
কাস্তের ধারালো বুক পেট পেতে নিলো যে মহামানবী, তাকেই আমরা
খাদ্য বলে ডাকি।
*
লোকটি গাছতলা থেকে নেই হয়ে গেলে
তার ছায়ার কথা বারবার ভাবে গাছ –
একটি সন্তানশোক! কেমন মায়ায়
বেঁধেছে দ্যাখো গাছকেই
সংসার
লাবণীদির ভরা সংসার।
লাবণীদির ছুরি-কাঁটা, কাজের মাসি, চিকেন স্টু।
গন্ধরাজ তেল।
রোজ রাতে শুতে যাওয়ার আগে কালো দুর্গাচুলে
গন্ধরাজ তেলের নেশা মাখিয়ে দেয় লাবণীদি!
আর চুলের গোড়া থেকে সযত্নে বের করে আনা নেশাড়ু
স্বামী নামের উকুনটাকে দুনখে চাপ দিয়ে
পুট করে মেরে ফেলে।
বাঁশ-বিষয়ক
বাঁশবাগানে ঘেন্না ছুঁড়ে দিওনা।
এই যে তোমরা অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে লোহার মতো
বাঁশকে ধারালো করে পাউরুটির নরম কেনো; এই যে বাঁশের বাড়ি –
ঝড়জলখরায় ছাতা ধরা শক্তপোক্ত গাছের প্রাসাদ! আলোর মোরাম শেষ হয়ে এলে
একদিন এই বাঁশই বুকে টেনে নেবে দেখো –
বুকেপিঠে চাপিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে পাণ্ডবপ্রস্থানপথে –
লাল আয়ুমোরামে পড়ে থাকবে
তোমাদের চেহারা –
সাদা খইয়ের কুঞ্চন।
বাঁশবাগানে ঘেন্না ছুঁড়ে দিওনা তাই।
চাঁদের শান্ত উড়িয়ে দাও; জটাজূটধারী
বৃক্ষমহর্ষির সহস্র প্রাচীন শান্ত
বাঁশি
সাপের বাঁশিটির কথা কী ভাবছ?
সম্মোহনী কাঠ! ফুঁ বায়ু বুলিয়ে চলেছে জীবনভর
তোমার ওঠাবসায়
প্রশ্ন
ধরো ধরা পড়ার আগে শেষবার তুমি পালাতে পারলে কিংবা
ধরা পড়ার আগে তোমাকে শেষবার পালাতে দেওয়া হল
এই ঘটনাকে তুমি কীভাবে বিশ্লেষণ করবে —
আত্মহত্যার অভিশাপ না কি সাপুড়ের অট্টহাসি?
ঘুম
ঘুমের ভেতর লুকিয়ে রাখি শিরদাঁড়াদের গান —
এক আশ্চর্য, অত্যাশ্চর্য বুনতে থাকি
ফসল সেলাইয়ের মতো হৃৎপিণ্ডের লাল মাঠ
আমার সূঁচকে বিদ্ধ করে। ফালা ফালা করে দিতে আসে
শিল্পী আঙুলকে;
সেলাইগানের তর্জমা শেষ হলে তা সমর্পণযোগ্য মনে করতে হয়,
নিয়মমাফিক!
এক আশ্চর্য, অত্যাশ্চর্য বুনে দেখি আশেপাশে কেউ নেই
হেমন্তের আর্তনাদমুখর সন্ধ্যা ছাড়া —
বেদনার কালো মরাইয়ের পায়ে আমার শিল্পকাঁথা জমা দিই,
জোড়হাত কপালে ঠেকিয়ে আঙুল একলব্যতার প্রতিশ্রুতি রাখি
ক্ষমার বিনিয়োগ করে;
ঠিক তখনই ঘুমের ভেতর,
এক পরমাশ্চর্য ঘুম আমাকে গ্রাস করে।
শিল্পীর সেলাইব্যথা খুলে, শিরদাঁড়া খুলে উপশম দেয় আরও বেশি
আশ্চর্যের দেশে
6 comments on “কবিতা : শীর্ষা”
ছায়ারোদ
কবি শীর্ষা তাঁর কবিতায় ছোটো ছোটো চিত্রকল্প তৈরি করে শিল্পীর সেলাইয়ের ব্যথা তুলে ধরেছেন।
Shirsha Mondal
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Arghya
প্রতিটি কবিতাই অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্যকল্পে সন্নিবিষ্ট। নদী, ছবি, সংসার, গাছ, ফেরিওয়ালা বিশেষভাবে আপ্লুত করল।
কৌশিক সেন
প্রতিটি কবিতায় অসাধারণ। চিত্রকল্প বুনন অনবদ্য। কবি শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। শুভ কামনা শ্রদ্ধেয়া.
Shirsha Mondal
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
Shirsha Mondal
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।