স্বপ্ন
গভীর শীতের রাতে,
ঘুমের অন্দরে ঘাই দিয়ে যায়,
অতীতের ভুলে যাওয়া স্বপ্নেরা।
যেনবা প্রাচীন বোয়াল–
বিরাট হাঁ-মুখ ক্ষুধা নিয়ে
গিলতে আসছে
আমার রান্নাবাটি সংসার।
অস্ফুট গোঙানির সাথে
ধীরে ধীরে পাতলা হয়
ঘুমের চাদর।
অথচ সমস্ত শরীর তখনও জড়বৎ
কী এক অনিমিখ আশঙ্কায়।
পাঁচিলে উঠে বেড়ালটা ঠিক তখনই
সুর করে জোড়ে মরা-কান্না।
আর আমার চেতনা প্রশ্ন তোলে,
ঠিক কতখানি উঁচু হলে দড়ির বাঁধন,
আজন্ম শিকড়ে গেঁথে থাকা পা
ভুলতে পারে মাটির বারণ!
দিনযাপন
পরিত্যক্ত রেললাইনের ওপর
ভোরের কুয়াশা জমে থাকে।
যেভাবে তোমার চোখে
চিরস্থায়ী বিষাদ।
মেঘে মেঘে বেলা বেড়ে ওঠে।
জ্বোরো কপালের ওপর আলগোছে হাত রাখে
জানলার গ্রিল বেয়ে নেমে আসা
একফালি রোদ।
প্রদোষ গাঢ় হলে পরে,
ছায়ারা মিশে মিশে যায় গাঢ়তর ছায়াদের হিমে।
দিনের প্রকাশে যা কিছু তিক্ত, কটূ ও মধুর,
রাতের চাদরে তারা সব জড়াজড়ি ঘুমে।
নাবিক
নিপুণ হংস চঞ্চু দিয়ে খুঁটে খুঁটে
ছেনে নিতে চেয়েছি জীবনের যাকিছু সারসত্য।
অথচ শেষ খেলায় তুমিই বাজিকর।
যোগাযোগের নিত্যতা- দূরে ঠেলেছে
যেটুকু আকুলতা সম্পর্কের, যেটুকু অব্যক্ত–
অপেক্ষার কল্পান্ত পেরিয়ে আসা
একফালি চিঠির পাতায় যে নরম,
একই ছাদের নিচে, একই একঘেয়েমির তলায়
তার সবটুকু সুর কেটে যায়।
জন্মাবধি শূন্যকে ধ্রুবক জেনেছি সংসারে।
আর স্থিরতাকে ব্যক্তিত্ব।
কপর্দকহীন, টলোমলো জাহাজে
শান্ত, সংহত নাবিকের পদ স্বেচ্ছায় বেছেছি।
ডুবন্ত অদৃষ্টের ডেকে প্রতিস্পর্ধী পা রেখে
জীবনের গান গাইব বলে।
বিশ্বাস
আমার দু\’ আনার ভাড়াটে বাসাবাড়ি,
ছাদের দিকে চোখ রেখে প্রত্যহ
উড়ে বেড়ায় অসংখ্য চিল।
ডানায় তাদের লোলুপ জিজ্ঞাসা।
প্রতিটি স্বপ্নের মৃত্যুর পর
তাদের দাহ বা দাফন করার তরিকা
অজানা থেকে গেছিল, তাই,
তুলসি-চোখো স্বপ্নেরা থেকে থেকেই
ঘাই মারে নিশ্চিন্ত গেরস্থালীর
চির বন্ধ কপাটে।
বিষন্ন চাঁদের ওপর ভেসে থাকা মেঘেদের সর,
অলীক মায়ার অপার্থিব নির্বাচন।
কর্কশ শব্দ করে হয়তবা উড়ে গেল
একখানি প্যাঁচা, হয়তবা জীবনের ক্ষীণ আশাটুকু;
তবু এইটুকু সংস্কার বুকে নিয়ে বাঁচি,
সব মানুষের ভেতর মানুষ মরেনি এখনো।
ছাদের দিকে চোখ রেখে প্রত্যহ
উড়ে বেড়ায় অসংখ্য চিল।
ডানায় তাদের লোলুপ জিজ্ঞাসা।
প্রতিটি স্বপ্নের মৃত্যুর পর
তাদের দাহ বা দাফন করার তরিকা
অজানা থেকে গেছিল, তাই,
তুলসি-চোখো স্বপ্নেরা থেকে থেকেই
ঘাই মারে নিশ্চিন্ত গেরস্থালীর
চির বন্ধ কপাটে।
বিষন্ন চাঁদের ওপর ভেসে থাকা মেঘেদের সর,
অলীক মায়ার অপার্থিব নির্বাচন।
কর্কশ শব্দ করে হয়তবা উড়ে গেল
একখানি প্যাঁচা, হয়তবা জীবনের ক্ষীণ আশাটুকু;
তবু এইটুকু সংস্কার বুকে নিয়ে বাঁচি,
সব মানুষের ভেতর মানুষ মরেনি এখনো।
গেরস্থালি
১.
অতঃপর সমস্ত যুদ্ধ থেমে গেলে,
ক্ষমার চেয়ে বড় বোঝা আর মিলে না।
ক্ষমার চেয়ে বড় বোঝা আর মিলে না।
২.
তোমার আজীবন ক্ষমার ভিতর
যতখানি লুকোনো ছিল কান্নাজল,
তাহা থেকে দুই ঘটি দিয়ো প্রিয়,
শেষবেলায় পৃথিবীর পুণ্য স্নানে।
যতখানি লুকোনো ছিল কান্নাজল,
তাহা থেকে দুই ঘটি দিয়ো প্রিয়,
শেষবেলায় পৃথিবীর পুণ্য স্নানে।
৩.
এই ক্ষণে বেতারে এসেছে খবর,
আজ বিকেলে ঝড়ের পূর্বাভাস।
জীবনের যে চালাখানি উড়াইল ঝড়ে,
তারও কি ছিল কিছু আগাম জানান?
আজ বিকেলে ঝড়ের পূর্বাভাস।
জীবনের যে চালাখানি উড়াইল ঝড়ে,
তারও কি ছিল কিছু আগাম জানান?
সুফিয়ানা
এই ধূ-ধূ সময়ের বুকে দাঁড়িয়ে,
করতলগত শুধু আত্মপ্রবোধ।
করুণার গতি যেভাবে অন্বিষ্ট শূন্যতার দিকে,
সেভাবে মহাপৃথিবীর ভার নিয়ে মানুষ
ধুঁকতে ধুঁকতে হেঁটে চলেছে স্খলিত পায়ে।
অনুগত মুরিদের মতো,
অগ্নিকুন্ডের পাশে এসে বসেছি একেলা।
যাহাকিছু প্রাপ্ত গুহ্য জ্ঞান, সবটুকু জড়ো করে,
ইড়া পিঙ্গলায় ঢেলেছি
সমস্তজীবনের অর্জিত অনুশাসন;
যেভাবে তিরস্কৃত পিতা
ভর্ত্সনা করে অবোধ শিশুকে।
অর্বাচীন বজ্রযোগীর দেহভাণ্ডে
অবিরত ঐহিক বজ্রপাত,
প্রথম তলবটুকুর শেষে, চোখ মেলে দেখি
দেহভাণ্ড নির্বিকল্প, চারিদিকে শূন্যতা অপার।
করতলগত শুধু আত্মপ্রবোধ।
করুণার গতি যেভাবে অন্বিষ্ট শূন্যতার দিকে,
সেভাবে মহাপৃথিবীর ভার নিয়ে মানুষ
ধুঁকতে ধুঁকতে হেঁটে চলেছে স্খলিত পায়ে।
অনুগত মুরিদের মতো,
অগ্নিকুন্ডের পাশে এসে বসেছি একেলা।
যাহাকিছু প্রাপ্ত গুহ্য জ্ঞান, সবটুকু জড়ো করে,
ইড়া পিঙ্গলায় ঢেলেছি
সমস্তজীবনের অর্জিত অনুশাসন;
যেভাবে তিরস্কৃত পিতা
ভর্ত্সনা করে অবোধ শিশুকে।
অর্বাচীন বজ্রযোগীর দেহভাণ্ডে
অবিরত ঐহিক বজ্রপাত,
প্রথম তলবটুকুর শেষে, চোখ মেলে দেখি
দেহভাণ্ড নির্বিকল্প, চারিদিকে শূন্যতা অপার।
অবহেলা, আর যা কিছু অপ্রয়োজনীয়
অনন্ত সমুদ্রের দিকে হেঁটে যেতে যেতে
মুঠো ভরে তুলে নিয়েছি বালু রাশি খানিক।
যেটুকু অনুকম্পা এই শীতের শহরে
তোমার বালিশের ওমে দিয়েছে আশ্রয়
সেটুকু প্রশ্রয় তুলে রেখো, আগামীজন্মে
তোমার প্রিয় সারমেয়টি হয়ে যেন জনমিতে পাই;
এইমাত্র সুখকণা চাদরে বিছানায়,
ডুবে যেতে যেতে ছড়িয়েছি রোদ্দুর–
তটভূমিতে। আরো যা কিছু অবহেলার,
আমারই মতো নাছোড়বান্দা লেগে থাকে,
দুই হাত, দু\’পায়ে তাহাদের ঠেলে ফেলে দিয়ো,
তোমার কুশাসন পবিত্র হোক,
শান্ত হোক তব আরামের ঘুম।
মুঠো ভরে তুলে নিয়েছি বালু রাশি খানিক।
যেটুকু অনুকম্পা এই শীতের শহরে
তোমার বালিশের ওমে দিয়েছে আশ্রয়
সেটুকু প্রশ্রয় তুলে রেখো, আগামীজন্মে
তোমার প্রিয় সারমেয়টি হয়ে যেন জনমিতে পাই;
এইমাত্র সুখকণা চাদরে বিছানায়,
ডুবে যেতে যেতে ছড়িয়েছি রোদ্দুর–
তটভূমিতে। আরো যা কিছু অবহেলার,
আমারই মতো নাছোড়বান্দা লেগে থাকে,
দুই হাত, দু\’পায়ে তাহাদের ঠেলে ফেলে দিয়ো,
তোমার কুশাসন পবিত্র হোক,
শান্ত হোক তব আরামের ঘুম।
One comment on “কবিতা : বিপাশা ভট্টাচার্য”
ছায়ারোদ
কবি বিপাশা ভট্টাচার্যর কবিতা সংসার ও সংস্কারের মধ্যে বেঁচে থাকার আশ্রয়।