ভাত বিষয়ক
সুবর্ণ,সুডৌল গরম ভাত থেকে ধোঁয়া নয়, ওঠে চাষির দীর্ঘশ্বাস ।
আমার গালে লেগে থাকে, নোনাজল, কয়লার মতো মেঘ পুড়ে ছাই নেমে আসে ।
কোন খড়ের চালে মৃত জোনাকিরা ভুত হয়ে
নাকি সুরে কথা বলে, গান গেয়ে ওঠে ।
খড়ের চালের নিচে রাতভর খিদে ভুলে থাকার কৌশল ভেবে চলে জীবিত জোনাকিরা ।
অবশেষে ভোর হলে , মৃত এবং জীবিত জোনাকিরা ভাতের কথা বলে, ভাত রান্নার পদ্ধতি নিয়ে কথা বলে, ভাতের স্বাদের কথা বলতে বলতে, মহান ভারতের আকাশে, আরো একটি রাত্রি নেমে আসে ।
কাযু
উৎসর্গ : শুভদীপ সেনশর্মা, দেবযানী ভট্টাচার্য
অর্ক মুখার্জীর গান শুনতে শুনতে বেড়িয়ে এলাম আয়ারল্যান্ডের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম,
আমি অবশ্য সেইখানে গাছপালা, মেঘ বা পাখি দেখতে যাইনি, শুধু আইরিশ কিশোরীর গালে পরা টোলের গভীরতা মাপতে গিয়েছিলাম, আর, কোন আইরিশ যুবতীর গোপন তিল তুলে এনে, আমার পাঁচশ বছর বয়সী মাতৃভাষাকে উপহার দিতে চেয়েছিলাম ।
আজ একটি হিন্দি গানের দুলুনি এতো ভালো লাগলো, মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম,
কার গান? মেয়ে বললো আরকো । আমি বললাম আর কো ! মেয়ে বললো, এ আর কে ও , আরকো, লোকটা খুব গাঁজা খায় ।
অর্ক একটি বাদ্যযন্ত্র দেখিয়ে বলেছিলেন, এইটি গাঁজার ছিলিম নয়, একটি আফ্রিকান
বাদ্যযন্ত্র, কাযু । তারপর বাদ্যযন্ত্র টি বাজালেন, গাঁজার ছিলিমের মতো দেখতে
প্রাচীন বাঁশীটি বেজে উঠতেই কলকাতায় বৃষ্টির মতো নেমে এলো হাজার কৃষ্ণকলি, তাদের পায়ে কালো ধাতুর মল, গলায় পাথরের চন্দ্রহাড়, ঠোঁটে গালে মেঘ মেখে
তাঁরা বৃষ্টির মতো নেচে নেচে ভেসে যেতে লাগলো, নদীয়া থেকে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম থেকে পুরুলিয়া..
কাযু বেজে চলেছে পৃথিবীর সব ব্যার্থ কবির দীর্ঘশ্বাসে ।
জীবনকে জড়িয়ে ধরো ভালোবেসে
ফুলটি যদি ঝরে যেতে যায়, ঝরে যাক । তুমি দুহাতে জীবনকে জড়িয়ে ধরো, তুমি তো ফুল নও একদিনের আয়ু শেষে ধুলোয় গড়াবে ।
জীবন কে জড়িয়ে ধরো ভালোবেসে, ভালো না বেসেও হেসে ওঠা যায়। কতদিন গায়ে দাওনি প্রিয় জামাটি তোমার ? সাঁতার কাটোনি কতকাল !
বাঁচার কারন খুঁজে নিও অকারনে, কারন ছাড়াও কতকিছু ঘটে যায় । পাখিরা ঠোঁটে লিখে বাসার ঠিকানা, মেঘ থেকে রোদে উড়ে যায় ।
জীবনকে জাপটে ধরো ভালোবেসে , জীবন যাপন করো প্রবল ঘৃণায়, রাত গুলো কেটে যাক প্রেমে, অপ্রেমে। দিনপাত গভীর বেদনায় ।
জীবনকে জড়িয়ে ধরো ভালোবেসে…
বিষণ্ণ বালক
আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, বেশ বুঝতে পারি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি ।
আমাকে দেখে হেসে ওঠেনা সূবর্ন গোলাপ, জলঙ্গী দুহাত মেলে ডাকেনা আয় আয়, পূর্ণিমা রাত গুলি জেগে থাকে আমাকে ছাড়াই । সপ্তাহান্তে আসেনা আর প্রেমের প্রস্তাব ।
ধূসর মেঘেরা একা, একা একা ভেসে চলে যায়, অচেনা রোদ দেখে, হেসে ওঠে বিষন্ন পলাশ, আমাকে ছাড়াই বৃষ্টি, ঝুম ঝুম ঝুম ঝরে যায়, কিশোরীর নীলাভ গালে উড়ে এসে বসে প্রজাপতি ।
আমাকে ছাড়াই গান বাঁধেন, তিনি জাদুকর
তাঁর গান গাই আমি, মহাবিশ্বে বিষণ্ণ বালক !
শুশ্রুষা
আলো চালের ভাতের মতো ভাঙা ভাঙা মুমূর্ষু জ্যোৎস্নায় ঘুমিয়ে পরেছো, ভাতের গন্ধ
বৃথাই ভেসে যাবে ।
নামহীন কঙ্কালের ছায়া চাঁদের শরীরে
লেগে আছে, সেই কতকাল..
পরিযায়ী মেঘেরা কি জানে ?
কতটুকু ভেসে থেকে, বৃষ্টি হয়ে
কতটুকু ঝরে যেতে হয় !
এই আমি ধরেছি কলম, এই তুমি
ধরেছো বল্লম, প্রশ্নহীন! দ্বিধাহীন !
অ-চেতন, রাজ শুশ্রূষায় !
4 comments on “কবিতা : প্রতাপ মুখোপাধ্যায়”
Unknown
প্রতিটি কবিতাই সুন্দর। কাযু আগেই পড়েছি
drmukherjeepratap@gmail.com
অজস্র ধন্যবাদ ।
ছায়ারোদ
কবি প্রতাপ মুখোপাধ্যায়ের কবিতায় ইতিহাস ও ভূগোল ছাড়িয়ে শব্দের ঝুমঝুম বৃষ্টির বোধ রয়েছে।
drmukherjeepratap@gmail.com
অজস্র ধন্যবাদ ।