যে নদী
তিস্তা হতে পারে সে – যে নদী পেরিয়ে এলাম
তোর্সাও হতে পারে
তিস্তা এক মেয়ের নাম – তোর্সাও আর এক মেয়ে
বোঝাপড়া হয়নি কখনো
কথা বলতে বলতে পেরিয়ে এলাম যাকে
সে কি তিস্তা
সে কি তোর্সা…
রিখটার স্কেল – সাত দশমিক নয়
হাত বাড়িয়েছ – ধরতে পারলে না
কিছু বললে যাকে – শুনতে পেল না সে
গড়িয়ে পড়ল সবকিছু
খাট বিছানা চেয়ার টেবিল
গাছপালা শেকড়সুদ্ধ উপড়ে পড়ল
সরে গেছে প্লেট।
পাথর নামছে বাড়িঘর নামছে
খাটবিছানা নামছে গাছপালা নামছে
ধরতে পারলে না হাত
শুনতে পেলে না কথা – ভয় – শুধু ভয়
রিখটার স্কেল – সাত দশমিক নয়
ইতিহাস
কত সহজ ছিল মোগলসরাই-এর নাম বদলে দেওয়া
কত সহজ মেট্রো স্টেশনের নাম বদল। মাদ্রাজকে চেন্নাই বানানো
বোম্বাইকে মুম্বাই
পিতৃদেবের নাম বদলে দেওয়া কত সহজ
আর ক্ষমতা থাকলে তোমার লেখার ওপর আলকাতরা লেপে দেওয়া
কিংবা একটা দেশলাই কাঠি…
ক্ষমতা থাকলে ধড় থেকে মাথাটাকে জাস্ট নামিয়ে দেওয়া
বিজয় মিছিল করা কত সহজ
কত সহজ মোমবাতি জ্বালিয়ে বাড়ি ফিরে আসা
শুক্রবার, ২ আগস্ট ২০১৯
মা-মরা মেয়েটা ভোরে বেরিয়েছে কাজে
সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল
বাড়ি ফিরল না।
শেষবার ফোন করেছিল বিকেলে
ফিরতে দেরি হবে বলেছিল
কত দেরি হবে, সে বলেনি
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামল
ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে
সে এখন পরিসেবা সীমার বাইরে
উনিশ বছরের মেয়ে যাকে ভালোবাসে
সে এসেছে। তাকে নিয়ে
রাস্তায় বেরিয়েছে বাবা।
হাতে টর্চ আার মোবাইল।
সে এখন পরিসেবা সীমার বাইরে
ওরা কথা বলছে না কোনো
ওরা খুঁজতে বেরিয়েছে তাকে
মধ্যরাত পার হয়ে যাচ্ছে
আকাশে নক্ষত্র, কালপুরুষ
চলো
চলো, স্টেশনে বসি। দেখি লোক-চলাচল।
ট্রেনের চলে যাওয়া দেখি
আলো কমে আসা অপরাহ্ন দেখি ভোর দেখি
হাত ছেড়ে চলে যাওয়া বিষাদ দেখি
হাত ধরে উঠে যাওয়া প্রণয় দেখি
রাগ দেখি। অভিমান দেখি। অল্পে খুশি হওয়া বালিকাকে দেখি
অসন্তুষ্ট যুবককে দেখি। অখুশি বৃদ্ধকে দেখি। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া
প্রৌঢ়কে দেখি। তিন মাস পরে ফিরে আসা যুবতীকে দেখি।
এস্কেলেটরে নেমে যাবার আগে
মুহূর্তের চুম্বন দেখি
চলো চলো…
7 comments on “কবিতা : দীপক রায়”
suman dutta
সবকটা কবিতাই কত সাবলীল সুন্দর । খুব নাড়িয়ে দেয় বোধ ।
ছায়ারোদ
কবি দীপক রায়ের কবিতা হালকা চালে গভীরতা ছুঁয়ে গেল।
Shirsha Mondal
দারুণ কবিতা । প্রথমটিই চুম্বক। টেনে নিচ্ছে পাঠককে।
পার্থপ্রতিম মজুমদার।
ভাল লাগল।'পরিষেবা' হবে।
drmukherjeepratap@gmail.com
খুব ভালো লাগলো । সব কটি কবিতা ।
অনিমেষ মণ্ডল
দীপকদা আমার অত্যন্ত প্রিয় কবি।শ্রদ্ধাবনত তাঁর কবিতার কাছে ।
সমীর দে রায়
ভালো লাগলো। যেভাবে দীপক দেখে তার চেয়ে একটু অন্য রকম। রহস্যময়তার আবহ, যেটা দীপকের কবিতার একটা প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য বলে আমার এতদিন মনে হতো, সেটা এই কবিতাগুলিতে অনুপস্থিত বলে মনে হল। তবে এই বদলটা জরুরী।সুপাঠ্য কবিতা, দীপককে ধন্যবাদ।