নীলাভ আকাশ ক্ষত ঢেকে রাখে
আকাশ কি কখনো পুড়ে যায়
যতদূর যাওয়া যায়
আমাদের গ্রাম
জীবন আমাকে যেটুকু দিয়েছে
মরীচিকা
কমলা প্রেস
পরদেশী
সূর্য যার এত কাছে থাকে !
পাখিও ওড়ে বিপুল বিস্তারে
অথচ নিচে মৃত্তিকায় প্রায়শই
অরণ্যের দহনের কথা শুনি,
নদনদী সমুদ্র জলাশয়
প্রতিদিন বাস্পীভূত হয়ে যায়
মানুষও তির্যক ফলায় বিদ্ধ হলে
ছায়া খোঁজে বনানীর।
সূর্য তার এত কাছে থাকে
তবুও আকাশ
গোপনে গোপনে ক্ষত ঢেকে রেখে
নিজেই নীলাভ হয়ে
পাখিকে সাহস জোগায়
অবিরাম দিগন্তের দিকে…
সবার উপরে
আমাদের করতল জুড়ে একটাই মানচিত্র
যতদূর চোখ যায়
সবুজে শ্যামল
কুয়াশা সরিয়ে দেখি
দিগন্ত
মায়েরই মতো
কাছে এসে তুলে ধরে
আমাদের বিহ্বল মুখ।
স্বচ্ছ জলে উজ্জ্বল হাঁসের মতো
ভাসমান গ্রাম
পুকুরের আয়নায় মুখ দেখে
আমাদের আহত আকাশ
পাড়ে দেখো
ঐ সেই ধোবিঘাট
ঐখানে আশেপাশে চন্ডীদাস থাকেন…
যতদূর যাওয়া যায়
একা একা কতদূর যাওয়া যায়!
ভাবতে ভাবতে আলো এসে পড়ে মুখে
দূর থেকে আলো আসে
কতদূর জানা নাই
জোনাকিও সেসময়
কাছে এসে কুশল শুধায়
কয়েকটি শুকনো পাতা ঝরে পড়ে
পথের ধুলোর উপরে
মৃতদের ফিসফাস শোনা যায় …
চারদিকে কত যে আপন
তবু কেন একা লাগে চরাচর
তবু কেন মনে হয়
কেউ যদি পাশে বসে
সোহাগে চুম্বন করে
কপালে ও গালে
আমি তবে নিশ্চিন্তে
পাতাদের দলে চলে যাই …
আমাদের গ্রাম
যেরকম খানিকটা পাল্টে গেলে দিগন্তের রং
সব আয়োজন ব্যর্থ হয়ে যায়
মহাকাশ জেগে থাকে একা
নিচে শুধু অন্তহীন ধানখেত
সবুজ ময়ূরপেখম
নেচে ওঠে অস্ত গোধূলিতে
এসময় কোনো এক কক্ষচ্যুত তারা
ভূমণ্ডলে আমাদের গ্রাম হবে বলে
বিকিরণে ক্ষয়ে ক্ষয়ে
নিভে আসছে দ্রুত …
জীবন আমাকে যেটুকু দিয়েছে
একদিন আমাদের দেখা হবে ঠিক
পথে হোক বা প্রান্তরে
শরীরে বা অশরীরে
ভাবতে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ঘন হয়ে এলে
কার যেন ছায়া পড়ে জ্যোৎস্নায়
মেঘলোক নীচু হয়ে আসে
দেবতাদের রঙিন জামার প্রান্ত দেখা যায়
তারপর পুনরায় আকাশে মিলায়
আমি একা নিখিলের দুয়ার খুলে
ডাকাডাকি করি
চারদিকে প্রতিধ্বনি ঘিরে ধরে
জীবন আমাকে যেটুকু দিয়েছে
সেটুকুই পাই শুধু
তার বেশি পাই না কখনো
মরীচিকা
একটি রেখা বিভাজিত করে রেখেছে আমাদের
যেন সীমান্ত বরাবর একটি মসৃন তারকাঁটা
তার দুপাশে দুটি চরাচর
সেখানে রোদ্দুর এসে পড়লে
অনেকটা বালিয়াড়ির মতো দেখায়
হাঁটতে হাঁটতে খানিকটা এগিয়ে গেলে
দেখতে পাই
একটা সম্পর্কগাছ
দুহাত বাড়িয়ে দাড়িয়ে আছে
কাছে গেলে দেখি
কোনও জলাশয় নেই
শুধু চিকচিক করছে বালি
অথচ দূর থেকে মনে হচ্ছিল
অনেকটা আকাশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি
কমলা প্রেস
ছোটবেলায় আমাদের বাড়ি ছিল
কমলা প্রেসের গলিতে
এই একটি ঠিকানা উচ্চারণ করতে করতে
আমার রক্তে কেমন জানি মিশে গিয়েছিল
আজ এত বছর পরেও
কমলা প্রেস কথাটি উচ্চারিত হলে
মনে পড়ে সেইসব দুপুরের কথা
কাঁচা আম চিবোতে চিবোতে
বসে থাকতাম রেলিংয়ের ধারে
আমি আর ….
এখন এই মধ্য যৌবনে
বহুতলের নির্জন বারান্দায়
দাড়িয়ে থাকতে থাকতে
বিনম্র জোৎস্নাকে চুপি চুপি জিজ্ঞেস করি
তুমি কি কখনো
কমলা প্রেসের গলিতে ঢুকছিলে?
কেন জানি না
সেইসব দুপুরের কথা
আমার কেবলই একটা সমীক্ষার মতো
মনে হয় আজও
কেননা সেইসব দিনগুলিতে প্রণবেশ সেন
প্রতি রাতে রেডিওতে সমীক্ষা পাঠ করতেন
পরদেশী
শহর ছাড়িয়ে কিছুটা উত্তরে
তারপর পূর্বে গেলে
আমার পিতার জন্মভূমি
ছোটবেলায় কয়েকবার হেঁটেও গেছি
তখন ঐ রাস্তা
তার দুপাশের গাছপালা
এসব বড় আপনজন বলে মনে হতো
কত কথা হতো তাদের সঙ্গে মনে মনে
শহরের মানুষ এসব বোঝে না কখনো
তাই ঐ রাস্তা,গাছপালা
এখন কদাচিৎ গ্রামে গেলে
ফ্যালফ্যাল করে শুধু দেখে
চিনতে পারে না
তখন বড় মায়াময় মনে হয়
এইসব অপার্থিব আয়োজন …
এক জন্মে একবার
দূরের আকাশে দানা বেঁধে আছে
মানুষের গভীর বিশ্বাস
ধুলোতে এসে পড়ছে
ফোঁটা ফোঁটা রোদ্দুর
আমি কী করে তোমার কাছে যাব
তির্যক ফলার মতো এই বেগবান দুপুর
বিদ্ধ করছে আমাকে
রক্ত ঝরছে আমার প্রতিটি ক্ষতস্থান থেকে
দুপুর গড়িয়ে নামছে
উঠোনের পেয়ারা তলায়
একটু পরেই নিঝুম অন্ধকারে
কিছুটা আলোকিত হবে আকাশ
হয়ত তখন তোমাকে দেখতে পাব
এইজন্মের জন্য একবার …
আমার মায়ের মুখ
এ জীবন একদিন সূর্যাস্ত হবে
বিদায়ের গান গাইবে
সারি সারি বৃক্ষদেবদেবী
গ্রামীণ নদীর কোনও মজা চরে
দাহ হবে পুরাতন দেহ
চিতাকাঠে ঝরে পড়বে
শুদ্ধতম নক্ষত্রের মন্ত্রপূত জল
সে মুহূর্তে আমি
আর একটি গর্ভের ভিতর
চারিত হতে হতে
ভাবব আমার মায়ের মুখ
মাতৃত্বের তৃপ্তিমাখা
6 comments on “কবিতা : অনিমেষ মণ্ডল”
Unknown
খুব ভালো লাগল। 'আমার মায়ের মুখ' অসাধারণ
ছায়ারোদ
কবি অনিমেষ মণ্ডলের কবিতায় মরমী মেঘের ভিতরে সম্পর্কগাছের গল্প ফুটে উঠেছে।
অনিমেষ মণ্ডল
অনেক শুভেচ্ছা রইল
অনিমেষ মণ্ডল
অনেক শুভেচ্ছা রইল।এসবই একজন কবির প্রিয় পাওয়া ।
অনিমেষ মণ্ডল
কমলা প্রেস কবিতাটিতে 16 নং লাইনটি হবে …কমলা প্রেসের গলিতে ঢুকেছিলে
অনিমেষ মণ্ডল
তিন সম্পাদককে আমার হার্দিক শুভেচ্ছা আর অফুরান ভালোবাসা