সুবর্ণরেখার ঈশ্বর আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে আজকাল
আমার কোনও সীতা নেই তবু
নিজেকে মনে হচ্ছে রামায়ণ রচনা করে চলেছি অজান্তেই
বাহাদুর খানের সুরমুর্ছনা নাগচম্পা তৈরি করছে বুকে
আমি মদ্যপ পায়ে সপ্তকান্ড আঁকি
অস্থির হাঁটাপথে পূর্বপুরুষের ভিটে খুঁজি
আমি ঘোলা চোখ নিয়ে অন্ধ গলিতে ঢুকি
অভি ভট্টাচার্যর মতো
টলমল পায়ে
মুখোমুখি সুবর্ণরেখা
আমার পাঁজর ভেদ করে শুধু
বিলি কাটে
নিশি
ডাক
বিনু,বিনু,বিনু…
জেরা
নাম কি রে তোর?
কালুরাম।
কালুরাম কী?
কালুরাম।আবার কী?
থাকিস কোথায়?
গড়িয়াহাট ব্রীজের নীচে।ফুটপাতে।ভিক্ষে করি…
আজ সকালে উঠে কী দেখলি?
লাশ পড়ে আছে।মোড়ের মাথায়।কেউ ছুঁতি চাইসে না।পাশ কাটিয়ে চলি যাচ্ছে
দেখেছিস আগে মানুষটাকে?চিনিস?
মেয়েমাইনসেরে চিনবো কীভাবে।মনে হলো বড় ঘরের।কী জানি।
ঘরে কে কে আছে তোর কালুরাম?
বউ ছিল।চলি গেছে।মেয়েডা কুথায় জানিনা।আর কেউ নাই।
ঘর কোথায় তোর?
গোপালগঞ্জ ।নদীপার।জমি ছিল।ধান দিতাম।সে এক দিন ছিল।
লাশটা কী হলো তারপর?
নেয়ে গেল।মড়কের গাড়ি ।শহরজুড়ে মড়ক লেগেছে না!
তোর ভয় করে না মড়কে?
না।আমার ভয় নাই।মুখোশ পরতে পরতে পরতে এখন বেশ লাগে ।হক্কলের মুখোশ দেখতি পাই।
মরার ভয় নেই তোর?
মরেই তো আসি বাবু।মড়ক কী করবা?এ মড়ক তো বহুদিনের।এ মড়ক মাইনসের মনের।এখন মন ছাড়ি দেহ ধরসে।এই যা।
ধুলো উড়িয়ে আবার একটা মরার গাড়ি চলে গেল রাস্তার ওপার থেকে এপারে।
ঝড়পরবর্তী
ঝড় চলে যাবার পর
পড়ে থাকে ছোট বড় মাঝারি আকৃতির
ভালোবাসার শব।
তাদের ছাদের টিনের চাল উড়ে গেছে
খেতের পাশাপাশি আগলিয়ে রাখা খড়ের দেয়াল পড়ে গেছে
মাটির দেয়ালে চাপা পড়ে গেছে সন্ধ্যাপিদিম
ঝড় বয়ে যাবার ঠিক পর
চাদর মুড়ি দিয়ে আসে বিস্মৃতি
তারা ভুলে যেতে বলে
মুছে দিতে বলে
বৃষ্টিজলের দাগ তবু প্রতিবার
গাঢ়তর হয়
ওরা মণিপুরে চলে গেলে
একলা কোয়ার্টার খাঁ খাঁ করে
আইসিইউ আজ আলো জ্বালালো না কেউ
সাতনম্বর ওয়ার্ডে কেউ এনে দিল না দুপুরের ঘুম
ওরা বাজার করতে গিয়ে আমাদের টিটকিরি শুনেছে
শপিং মলে গিয়ে শুনেছে \”রেট কতো?\”
ডিউটিতে মালিকবাবু কখনো ওদের টুথব্রাশ,কখনো দোমরানো টিনের কার্নিশ ভেবে উপেক্ষা করেছেন
অথচ ওরা ছিল রথের চাকার মতো
বৃষ্টিদিনের বর্শাতির মতো
প্রদীপের সলতের মতো
ওরা মণিপুরে চলে গেলে
আমরা বুঝতে পারলাম
ওরা আসলে দেবী ছিলেন
পর্বত থেকে নেমে এসেছিলেন
ব্রতপালনের পর ফিরে গেছেন দেবতাদের গৃহে
আমরা সমতলবাসী
আমরা সমতলেই রয়ে গেছি
একটি অতিমারীর মতো
অতিমারী আমাদের বাড়তি সতর্কতা এনে দিল
আমরা দূরে ছিলাম আগেই,চলে গেলাম আরও দূরে
অথচ ছোট্ট মেয়েটি আমাদের শেখালো
প্যাডেলে পা রাখলেই পনেরোশো মাইল হয়ে যায় একটা সংখ্যা
কৃষকটি শেখালো মৃত্যুর পর চাদর বা চিতা
দর করলে কমে আসে দাম
হাসপাতালেই যাদের ঘর আর সংসার
তাদের কোনও পিছুটান থাকতে নেই
রূপোলি পালক পরা পারিজাত ফুল
অতিমারীর মতোই আমরা পরস্পর
নিভন্ত কোজাগরী যাপন করতে থাকি
6 comments on “কবিতা : শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী”
অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
কথনভঙ্গিমা❤️
ছায়ারোদ
খুব ভালো
Shirsha Mondal
বেশ ভালো লেগেছে।
শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী
ধন্যবাদ
শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী
ধন্যবাদ
শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী
ধন্যবাদ