কাছে আসার সংলাপ
মনের ভেতর থেকে
বেরিয়ে যায় মন
শরীরের ভেতর
থেকে শরীর
মেঘের ভেতর
থেকে মেঘ
শহরের ভেতর
থেকে শহর
বেরিয়ে যেতে যেতে
বল লুফতে লুফতে
শূন্যের খেলা
গভীর জঙ্গলে
নির্জন পথে
গৃহঅন্দরে
রাত্রিশয্যায়
মুখোশ–ঢাকা
মুখে মেঘের ছায়া
বরফ–শীতল
রোবট যেন বা
স্পর্শহীন এই রাস্তা
শুয়ে আছে
আকাশের দিকে
বুক চিতিয়ে
অপেক্ষা
নীরবতা, নির্জনতা
ভেঙে নামবে
বৃষ্টি, ঝরনা
আসবে এগিয়ে
বন্দি মানুষ
উড়ে যাবে
পাখির মতো
দেশকালহীন
সীমানাহীন
ভূমির খোঁজে
ফিরে পাবে
হাত হাত রেখে
শরীরে শরীর ছুঁয়ে
পরস্পর থেকে
আগুনের
উষ্ণতা
ভালবাসার মন্ত্র
গায়ে মেখে
জ্যোৎস্না স্নান
এই অন্তরীন
এই দূরত্ব
কাছে আসার
ঠোঁঠে ঠোঁট রাখার
মুগ্ধ স্বরলিপি
দুরূহ
স্পর্শহীন বেঁচে থাকা এক দুরূহ পাটিগণিত
সিঁড়ি দিয়ে উঠলেই অসহায় আকাশের ঘুম
চৌকাঠে স্থির সময়, অতিমারির নিত্য নতুন
থিমসং আছড়ে পড়ছে ভীত বোবা ড্রইংরুমে
ভেসে যাওয়া
কাঁদতে কাঁদতে কাঁদার সমীকরণ ফেলেছি হারিয়ে
জেগে উঠি কোনো অচেনা দ্বীপে, ভেসে আসে জাহাজ
কাটাকুটি খেলার আলপনা জড়িয়ে ধরে অবাক ভোর
ভেসে যাওয়া সবুজের স্রোতে জেগে থাকে প্রলোভন
চিঠি
চিঠি কাল নাকি পরশু
সেই যে সবুজ চিঠি
দিবাস্বপ্নে মোড়া
মেঘের নরম
আলোয় ঘেরা
মাটির
সোঁদা গন্ধে
স্নেহের
শিউলি ছড়ানো
সিঁড়ি এক দুই
ঠিকানা
না, ঠিকানা
নেই লেখা
ভেসে চলা
রোজই
সকাল সন্ধে
দুপুর রাত
ভেসে চলা
বারবার
দুয়ারে শিকল
গাছের ছায়া
সরে গিয়ে
মনকেমনের
বেহাগ বাঁশি
গৃহহীনের
আবার
ঠিকানা কী
পাখির পালকে
গুজে দেওয়া
বিষাদ মেঘের চলা
উঠোনের দীর্ঘশ্বাস
অথবা সমীকরণ
নীরব নীল ভগ্নাংশ
চিঠির বাক্স
কাল রাতে
ভিজে গেছে
ভেসে গেছে
ফেলে আসা গান
নিভৃত আলপনা
লালফিতে
শিশুর হাসি
প্রেমিকার আলিঙ্গন
কাছের লোকেরা
সরে যায় দূর
এলোমেলো পথ
রাতের তারারা
লজ্বায় লুকিয়েছে মুখ
মেঠো আলপথে
হোঁচট খায়
দেশান্তরী বাঁশি
মৃত ফরিঙের স্তুপে
ঢাকা পরে গেছে
ভুলে যাওয়া
শীতলপাটি
নক্ষত্রের ওপারে
হিম শীতল
সমুদ্রঢেউ
এত কান্না
এত বিষাদ
এগিয়ে আসে
গম্ভীর রাত
জলপাই সন্ত্রাস
পাখি তো
উড়ে গেল
চিঠি মুখে
সকালে বা বিকেলে
হয়তো বা সন্ধেয়
হয়তো বা দুপুরে
হয়তো বা রাতে
তৃতীয় বিশ্বের
শরনার্থী–চিঠি।
বসন্ত
লুকিয়েছে মুখ
লজ্জ্বায়
ফিরিয়েছে মুখ
ঘৃণায়
তার
বাসন্তী বসন
ভেসে যাচ্ছে
কান্নায়
তার
রঙিন উত্তরীয়
আর ওড়ে না
দখিণা বাতাসে
সুন্দর
লুটোচ্ছে রাস্তায়
পুরবাসীরা
খোলেনি দ্বার
গেরুয়া ত্রাসের
কড়া নাড়া
আগুন শুধু
আগুন
জ্বলে
এখানে
ওখানে
ওড়ে ছাই
বিকোয় ভালবাসা
রাস্তায় রাস্তায়
অলিতে গলিতে
রক্তচক্ষু
হারিয়ে গেছে
রাঙামাটির সুর
গাছে নেই
কুড়ি, ফুলের
রঙবাহার
গেছে শুকিয়ে
শব্দ, বাক্য
মেঘের গায়ে
কাটা দাগ
কষ্টঘুণ
বসন্ত
লুকিয়েছে মুখ
লজ্জ্বায়
বসন্ত
গেছে ফিরে
মুখ ঢেকে
তার আঁচলে
নেই
শিমুলপলাশগন্ধ
2 comments on “কবিতা : দেবাশিস চন্দ”
Unknown
ড্রইংরুম আর বসন্ত কবিতা দুটি ভালো লাগলো
নেভানো আলো
চমৎকার