পোড়োবাড়ি
মরা মানুষের মনে জমে আছে
পোড়া কয়লার ছাই
গাছের বাঁকলে অনেকটা ঘুণ জমলে
জীবিতেরও মন মরে যায়
মনের ঠিকানা খুঁজতে বেরিয়ে
পথ মিশে যায় কবরে
কবরের কোনো মন নেই?
শুধু পাতা ওড়ে, হাওয়ার শব্দ
পামগাছ সারি সারি
সাদা ঘুমে, সাদা বরফের কুঁচি
সাদা বিষাদের দোলাচল।
চিৎকার করে উঠেছিল মন একবার
তারপর চুপ, পোড়োবাড়ি
মনের গভীরে সাঁড়াশির দাগ
হাঁসুলির কোপ গভীরে
বৃত্ত
ভাতের হাঁড়ি বৃত্তের মতো
বৃত্ত কমলালেবুর মতো
কমলালেবু পৃথিবীর মতো
গোলাকার হাসির মধ্যে গোলাকার কান্না
গোলাকার শোকসংবাদ
ঈগলের চোখ দিয়ে দেখছি
পৃথিবীকে
কমলালেবুকে
ভাতের হাঁড়িকে
বানানো গল্পের মতো তালসুপুরির বন
প্রকৃত গল্পের মধ্যে তেলচকচকে লাঠি নিয়ে ঘুরছে
হারান সর্দার, জমিদারবাবুর লাঠিয়াল
আমাদের হারানোর কিছু নেই।
আমরা কুচকাওয়াজ করি
আমাদের পরম্পরা কুচকাওয়াজ করে
আমাদের লেফট-রাইট শব্দে মুখরিত
ঈশ্বরের ছাপাখানা, অলীক বাগান,
জন্মান্ধ শহরের গোচরণভূমি
গল্পের অন্ধকারে
গল্প বলো কালোবাজারের।
মুঠো শক্ত করে আছি, ফাঁক দিয়ে উড়ে যাচ্ছে
চাল ডাল নুন।
গল্প বলো মৃত্যুচেতনার।
কতগুলি সিডেটিভ প্রয়োজন মশারির জাল ছিঁড়ে
মহাকাশে উড়ে চলে যেতে?
ঢুকেই পড়েছি যদি চিত্রনাট্যে, ছবির গভীরে
পালাবার পথ খোলা রেখো
জ্বলন্ত বয়লারে ঢুকে তুমি দেখেছিলে
অণ্ড ফাটিয়ে পক্ষীশাবকেরা
উড়ে বসে চিমনির মাথায়
ট্রিগারে আঙুল রেখে তুমি দেখেছিলে
রাধাচূড়াডাল ভর্তি ফুল।
এখন কী করবে তুমি?
ইস্কাপনের টেক্কা তোমাকে ডাকছে
মহাভারতের পাশা তোমাকে ডাকছে
খেলা হবে, মহোৎসব, বাজি ধরা হবে
করোটিতে লাল মদ
অন্যদিকে দুরু দুরু কেরানি-জীবন।
ভুবনবাবুর কথা
বারবার প্রসঙ্গ ছাড়াই ভুবনবাবুর কথা মনে পড়ে
তিনি শিরীষ গাছের ছায়া
কালপুরুষের আলো
জীবনের অন্ধ অনুভূতি তাঁর হেপাজতে রেখে
আমি কিছুক্ষণ ভারমুক্ত হই।
কৃতকর্ম পার হয়ে ছাদের কার্নিসে এলে
ধারণা বদলে যায়
তখনও ভুবনবাবুর কথা মনে পড়ে
তিনি শূন্য থেকে ঝাঁপ দিয়ে ডুবে যান
শূন্যের গভীরে
তিনি যেন পান্থশালা
তাঁর শূন্যতায় এলে মনে হয়
ত্রিপিটক থেকে যাত্রা শুরু করেছেন
ভোরের আগেই পৌঁছবেন সুফিসংগীতে।
চণ্ডীমঙ্গলের পৃষ্ঠা থেকে
চণ্ডীমঙ্গলের পৃষ্ঠা থেকে ফুল্লরার মতো
তুমি উঠে এলে ক্যানিং লোকালে
তীব্র হুইসেলে জাগে সমকাল, রামতনু লাহিড়ির পরবর্তী
বঙ্গসমাজ।
ফুল্লরার শ্রমজ্যোৎস্নায়
ফ্ল্যাটবাড়ি পরিচ্ছন্ন হয়
বেলা বাড়ে, কাক ডাকে
আঁশবাটি ঘুমিয়ে পড়ে নিস্তব্ধ দুপুরে
ফুল্লরার ক্লান্ত টিফিন কৌটো ফিরে আসে ক্যানিং লোকালে
গলি পার হয়ে গলি, আরও গলি
কলতলা, আরও যৌথকলতলা।
ভাঙা বোতলের কাচে রাত নামে
কুপির আলোয় কবিকঙ্কণ লেখে বারমাস্যা,
ফুল্লরার কথা
আত্মঘাতী ছায়া দোলে উড়ন্ত শাড়ির পাঁকে
তোমার গলার ঠিক নীচে থেমে থাকে।
4 comments on “কবিতা : দেবজ্যোতি রায়”
জয়ীতা ব্যানার্জী
ভালো লাগলো
সুব্রত পাল
ভালো লাগল।
Unknown
ভালো। শেষ কবিতাটি খুবই ভালো লাগল
Sudip Chattopadhyay
ভালো লাগলো