যতক্ষণ কাছে ছিল ততক্ষণ বিষাদগুলি আলাদা,
ভাসিয়ে দেওয়ার পর নদীর ঘাট থেকে
সমস্ত ইচ্ছে-বেদনাকে দেখায় সমান
যে প্রদীপ হাত ছেড়ে যায় তার আর কোন দুঃখ থাকে না
বুদ্ধ পূর্ণিমা
আগুন আঁকবে ভেবে ভেবে
সাদা ক্যানভাস রেখে শিল্পী চলে গেছে…
এমন এক রাতে কবি লিখেছিলেন-
‘পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে…’ এমন লগনে
সমস্ত পাণ্ডুলিপি খুঁটে খায় প্রিয় বকরং,
এমন ক্ষণে অন্ধকার শব্দটি লিখতেই
তোমার ভুলে যাওয়া মুখও সুনির্মল আলো…
সবকিছু মিথ্যা অথবা দৃশ্যত,
চিতায় জ্বলছে চাঁদের বিধবা মুখ
দোষ
দোষ রেললাইনের নয়, দোষ মালগাড়ির নয়,
দোষ ঘুমের নয়, দোষ হেঁটে আসার নয়,
হেঁটে আসা পথের নয়, দোষ ক্লান্তির নয়,
দোষ সরকারের নয়, দোষ শ্রমিকদের নয়,
দোষ কারোর নয়…
রেললাইনের ওপর পড়ে আছে কয়েকটি রুটি
সমস্ত দোষ ওই রুটির, সমস্ত দোষ মাটির
কামড়
একটা গোটা পাউরুটি খেতে আমার লাগে আট কামড়
গোপাল জ্যেঠুর দশ কামড়
অফিসের বড়বাবুর লাগে ছয় সাত কামড়
ছোট বৌদির তের চোদ্দ কামড়
দিদা খান আস্তে আস্তে কুড়ি বাইশ কামড়ে…
ফুটপাতের কালো বালক
এক কামড়ে সাবাড় করল গোটা পাউরুটি
মাছরাঙা
বাঁশ পাতা জল ছুঁয়ে থাকে
জলের ভিতরে গৃহবধূর স্বচ্ছ দেহ,
ঢেউটি দুলছে, ঢেউটি ভাঙছে…
স্নানের অন্তরে দেহের ছায়াহীনতা দেখে নিভৃত
মনোবেদনায় মাছ শিকারের পর উড়ে যায় মাছরাঙা,
পুরুষ বাঁশডাল নিঃসঙ্গ জল থেকে শূন্যে লাফিয়ে ওঠে,
মাছরাঙার উড়ে যাওয়া অব্দি বাঁশপাতা জল-ছুঁয়ে থাকে…
মৃত তারার আলো
জানে না বাঁশি, জানে না সেতু,
জানে না গাছ ও অন্ধ ভিখিরি
জানে না মাটি, জানে না সেতার
তারা জানে, সব সম্পর্ক শেষ হলে
যে যত দূরে থাকে যে যত দূরে চলে যায়
আলো মুছতে তত বেশী সময় লাগে তার
স্মৃতি
যতবার এসেছ ততবার ছায়াও এসেছে…
সমস্ত ছায়া আমি সযত্নে গুছিয়ে রেখেছি,
কমলা, বেগুনি, নীল ছায়া,
অল্পবয়সী ছায়া, বৃষ্টিভেজা ছায়া,
স্পর্শছায়া, বিরহ স্বভাবের ছায়া,
চিলেকোঠায় সূর্যাস্তে রচিত ছায়া…
তোমার প্রতিটি ছায়া এখন
আলাদা আলাদা মুখ
যার কেউ তুমি নয়।
দাঁড়কাক
গমের দানা
খুঁটতে খুঁটতে
সিঁড়ি বেয়ে
দাঁড়কাক উঠছে
লাফিয়ে লাফিয়ে
সিঁড়ির শেষে
অনন্ত শয়ান,
শৈশবের ঘুমন্ত
চোখ, আমি তার
ঘুমপাড়ানি গান
4 comments on “কবিতা : সৌমাভ”
Prodip de
খুব ভালো
কৌশিক সেন
অসাধারণ কবিতাগুলি…
Shirsha Mondal
অসাধারণ সব!
সন্তু কর
খুব সুন্দর লেখাগুলি।