*
একবার হায়দার ভাইয়ের বাড়িতে দাওয়াত পেয়েছিলাম। বাপিকে বলতেই এক ধমকে দাওয়াত খাওয়া \’ছুটিয়ে\’ দিয়েছিলেন! লাচ্চা নাকি গরুর তেল দিয়ে বানানো হয়। \’ঈদের দিন রান্না-বান্না কি কেউ তোমার জন্য আলাদা করে করবে?\’ —রাগে চোখ-মুখ লাল করে বলেছিলেন।
আমার আর যাওয়া হয় নাই। হায়দার ভাই মন খারাপ করেছিলেন কি না জানি না। হায়দার ভাই মারা গেছেন।
*
একবার ছোটকাকার এক বন্ধু ওসমান কাকার বাসায় ছোটকাকার হাত ধরে গিয়েছিলাম দাওয়াত খেতে। সেটা রোজার ঈদেরই দাওয়াত ছিলো যতদূর মনে পড়ে। ওসমান কাকার বাবাকে সবাই ডাকতো সদরপাগলা। বহুদিন পর্যন্ত আমরা ছোটরাও জানতাম তার নামই সদরপাগলা! একদিন কোনো এক গভীর শীতের রাতে সদরপাগলা ঘর থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে যায়। জনশ্রুতি আছে মাঠপাড়া দওয়ে সেই শীতের রাতে সদরপাগলাকে উত্তর পাড়ার জালাল সেখ ডুব দিতে দেখেছেন কিন্তু উঠতে দেখেন নাই! সেই থেকে সদরপাগলা নিখোঁজ!
ওসমান কাকার বাড়িতেই সেবার দুধের পিঠা খেতে নিয়ে আবিষ্কার করেছিলাম— দুধের পিঠা লবণ দিয়েও বানানো যায়।
*
ঘটা করে মনে নেই একা একা ঠিক কবে ঈদের দাওয়াত খেতে গেছি বন্ধুদের বাসায়। হুট করে ঠিক কবে বড় হয়ে গেছি। শুধু মনে পড়ে একবার ঈদের দিনে নামাজ ফেরৎ বন্ধুর মাথার টুপি মাথায় দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। মিলন ডাক্তার দূর থেকে তার ডিস্পেঞ্চারিতে ডেকে নিয়ে, ভয়েস চেপে রেখে কড়া করে বলেছিলেন, \’হিন্দুর বাচ্চা মোল্লাগোরে টুপি পইড়া ঘুরতে শরম করে না?? খোল্!\’
টুপি বা দাড়ি মোল্লাদের কওলা করা জিনিস এমন কথা শুনে নিঃশব্দে হেসেছিলাম সেদিন।
একদিন রুমু ভাইয়ের বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়ে দেখি দাওয়াত করেও হিন্দুদের জন্য তেমন কোনো ব্যাবস্থাই রাখে নাই। সেমাই খেতে দিয়ে ভাত-মাংস খাওয়ার আদর করতে করতে চাচী মৃদূ হেসে বলেছিলেন, \’মোনো ডাক্তারের ব্যাটা হিটলার তো খায়। খাও, কিছু হোবো না।\’
*
মনে আছে, ঈদ উপলক্ষ্যে একবার আমাকে একটা টকটকে লাল শার্ট উপহার দিয়েছিলেন রানী আপা। সকাল সকাল স্নান করিয়ে সেই শার্ট পড়িয়ে, বাম হাতে মুখ ধরে রেখে ডান হাতে চুলে চিড়ুনি করে দিতে দিতে বলেছিলেন, \’তোর বউ হইক আগে। তখন যদি ব্যাচা থাকি তা\’লে তাক একবার জিজ্ঞাস করমু এই রকম জংলি ব্যাটার সাথে ঘর কইরতে কি রকম লাগে? বউ থ্যাকপোনা ছ্যারা তোর!\’
তারপর ভাতৃবাৎসল্যে পরম মমতায় মুখে সেমাই তুলে খাইয়ে দিয়ে আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিয়ে সেই এঁটো সেমাই খেয়েই তার নিজের ঈদ শুরু করেছিলেন।
*
সকলের ঈদ আনন্দময় হোক।


2 comments
মহেন্দ্রনাথ
ভাল লাগল, তবে এটাই বাস্তব৷ তারা কখনও শুকরের মাংস খাবেনা, তা নিয়েও কবিতা লিখবেনা৷ কারন কেউ কখনও তাদেরকে মিথ্যা কথা বলে শুকর খাওয়াবে না৷
Unknown
সুন্দর লেখা ।