১.
জোনাকির ব্যাকুলতাই —- আলো ।
একদিন এ ছোট্ট অনুভব, মনের মধ্যে যেন
বলেই পালালো …
জীবনও তো এ রকম, আমাকে জানিয়ে দেয় কোনো সন্ধ্যাকালে
আমরাও তো আলো হতে পারি
আরও একটি অনুভবের বাড়ি ।
এরকম ব্যাকুলতা ভালো ।
চুপ করে বসে থেকে দিগন্ত মাখিয়ে ভাবি—-
জোনাকির ব্যাকুলতাই আলো !
২.
তুমি এসেছ, আর আমার মনে পড়ল পাখির কথা
ডানায় ডানায় যাওয়া…
থাক,ব\’সো ওই আসনটায়, ওই যে
কালিলাগা হেরিকেনের পাশে
কতদিন পরে যে এলে
\”মাধবীবিতান মাধবীবিতান\” ব\’লে আর আমি
ছুটে ছুটে বেড়াই না ।
জানো, এতদিনে আমি বুঝেছি যে
একটা কবিতা হাত নেড়ে আর একটা কবিতাকে ডাকে
আজ তোমাকে বলছি, কবিতা পিঠে টোক্কাও মারে …
পাখির কথা মনে হচ্ছে এইসব কথার তলায় -তলায়
ডানা ওপর-নীচ করছে …
হাওয়া হচ্ছে…
উড়ে যাচ্ছে … যাচ্ছে … তোমার থেকে দূরে…
তুমি তখন মাটিতে দাঁড়িয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে
একসময় বলে উঠবে,\”ওমা! যাহ্ ! চলে গেল ! \”
চলে-যাওয়া দিয়েই তো পাখি তৈরি ।
৩.
জানি, অলি তুমি —– পছন্দ করছ না
লেখা লাথি মারো, গান লাথি মারো — বোশেখে
হা হা দিন যায় অবহেলিতের ফাটকায়…
তবু দ্যাখো দেখি, কবিতার মতো ব\’সে কে?
মৃত্যু কি বসে?…ভুরু কুঁচকিয়ে উঠলে ।
স্টোভের মধ্যে গুঁজলে গোপন চুম্বন ।
অলি, স্থির থাকো ।… গান হবে ভাত ফুটলে ।
সেই গানগুলি আমরা দুজনে শুনব ।
জানি, অলি তুমি —- পছন্দ করছ না ।
মৃত্যু ধরিয়ে সাপের পেছনে ছুটেছি…
কিন্তু— পাইনি । শুধু হিসহিস । সাপ নেই !
লিখি, আমি লিখি… লিখে লিখে রাখি স্বপ্নে ।
অলি এতদিন!… শোনো চার যুগ ধ\’রে
লিখেছি, তুমি তা জানতে !
অবসাদ এসে লেখার মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বলো ?
জানি , এগুলিও পছন্দ করছ না
একদিন দেখো মৃত্যু বসাবো দু\’জনের পদপ্রান্তে।
৪.
সালার প্যাসেঞ্জার থেকে যে-মেয়েটি নেমে এলো জাস্ট
তাকে আমি মাউথ অর্গান খানি দেব
সে তাকে বাজাবে কি না সঠিক জানিনা
হয়তো সে বাজাবে না; মুখটি ফিরিয়ে নিয়ে
তাকিয়ে থাকবে শুধু কাটোয়ার দিকে
সেখানে একটি ছেলে , হয়তো তখনই
গঙ্গার পাড় ধরে হেঁটে যায় তাকে মনে ক\’রে
কিছুতেই বাজাবে না, তবুও মাউথ—অর্গান
হাতে দিয়ে বলে দেব—
\”দিলাম । কখনও এক রাত্রিবেলা ব\’সে
ধীরে ধীরে সুর তুলে একবার রক্তপাত ক\’রো
দেখবে, যুবতী হবে পুরো
মেয়েটি এগিয়ে এসে —- ফের ঘুরে উঠে গেল
সালারের ট্রেনে…
৫.
বুড়িদের বাড়িকে বাঁয়ে ফেলে
ইলাদের বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে এলাম
হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম ইবনবতুতার কথা
ভাবছিলাম ফা-হিয়েন কেমন ভাবে হেঁটে ঘুরতেন
তবে বাড়িতে এসে পা ধুতে খুব দেরি হয়ে যায়
খুব ভালো করে ধুই ।
কচলে কচলে, সাবান দিয়ে, জলের ধারায় ।
তবু খচখচ করে, ধুলো লেগে নেই তো !
একদিন ধুতে ধুতে দেখি
আমার পা একেবারে অন্যরকম দেখতে হয়ে গেছে
হলফ করে বলতে পারি—- এ আমার পা নয় …
তাহলে কী হলো !
কার পা আমার হয়ে উঠল একদিন !
Leave a reply