সব মৌমাছি
সব শূন্যতার আসা যাওয়া
গুণ গুণ করে
স্পষ্ট দেখি তাদের
আলোয় অন্ধকারে…
খুন হয়ে যাওয়ার পরেও
সে দাঁড়িয়ে থাকে
তার
রেখে যাওয়া হাঁটা চলা
কান্না ও প্রতিরোধে
আর্তনাদে ও আতঙ্কে
লেখা থাকে পুণর্জন্মের ইতিহাস!
অন্তরীন
এক শুনশান রাস্তা, মেঘাচ্ছন্ন
কৃষ্ণকায় গলগাথার মতো
পবিত্র আতঙ্ক নিয়ে ঢলে পড়ছে নিঃশব্দে
অনঙ্গ অন্ধকারে যেতে যেতে
অলর্কের মুখ ভেসে ওঠে…
অজস্র পাখির ডাক শুনি,
বুঝি প্রকৃতি বিস্মিত সবুজ
ঝুঁকে পড়ে….
নীচে অজস্র ফ্রিজ শটে
বস্তা বাঁধা,গোপনে পুড়িয়ে ফেলা
অথবা মাটির নীচে পুৃঁতে ফেলা
দেহ ভেসে ওঠে…
ভাঙা মই নিশ্চন্তে পড়ে থাকে
অজস্র পায়ের ফাঁকে ফাঁকে
সূর্য ওঠে,সূর্যাস্তও হয়…
অসমাপ্ত গানটুকু আর্তনাদ
হয়ে ফিরে আসে
মেঘাচ্ছন্ন, বজ্রপাতে ভরা
আকাশে চমকে ওঠা তারা
খসে পড়ে…
গোপন গর্তের দিকে পিপীলিকা শ্রেণী
এখনও খাবার পিঠে হাঁটে…
পরিযায়ী
পাশে রক্ত পাশে ঘিলু
পাশে রুটি পাশে চপ্পল
পাশে পুঁটুলি পাশে শিশু
পাশে হত্যায় বাঁধা রাস্তা…
শুধু দলা হয়ে যাওয়া পাতলুন
ছিঁড়ে পড়ে থাকা আরও পিপাসা…
মরা হরিণের সব ভস্ম
কাটা করতল কাটা স্পর্শ…
সব চুম্বন সব নৌকো
আর কিছু নেই শুধু হন্টন…
হেঁটে আসছিল কত মৃত্যু
ভাঙা ডাম্পার ভাঙা গর্ত
সব পরিযায়ী সব স্বপ্ন
পিষে থেঁতলে যাচ্ছে টুকরো
পাশে অন্তবিহীন কান্না…
কেউ রক্তের স্রোত গুনছো!
আমি গোপেশ্বর মাহাতো
আমি গোপেশ্বর মাহাতো
রাজমিস্ত্রির কাজ করি
কেরালার এক গ্রামে
আমার বাড়ি পুরুলিয়ার পুঞ্চায়
সেখানে আমার বাবা মা আর
স্ত্রী পুত্র থাকে….
আমি থাকি কাসারগড়ে
প্রতিদিন ৯০০টাকা রোজ-এ
মিস্ত্রির কাজ করি…
এখানে আমার পরিচিত বলতে
খলিল ও দফাদার
চেন্নফলা ও কুট্টি
আমি যে ঘরটায় থাকি তার ভাড়া
মাসে ৪০০০ টাকা
আমার ৪ দিনের রোজগার
আমি নিজে রাঁধি নিজে খাই…
তাই খাওয়া খরচ কম…
আমি টাকা জমাই
ছেলে মেয়েকে পড়াশুনো শেখাব
বলে
বৃদ্ধ বাবা মার চিকিৎসার জন্য
আর আমার স্ত্রীর শখ আহ্লাদ মেটানোর জন্য
আমার স্বপ্ন বলতে এইটুকুই
আমি থেঁতলে যেতে দেখছি
জাতীয় সড়কের ডাম্পারের তলায়
আমার দুটো কাটা হাত এখনও লাফাচ্ছে…
থেঁতো হয়ে যাওয়া পা দুটো
আমার ছিটকে যাওয়া নাড়িভুঁড়ি
আমার পুঁটুলির মধ্যে রাখা রুটি
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি…
আমার চোখদুটো ঠিক আছে
এতবড় অ্যাকসিডেন্টও কিচ্ছু হয়নি…
আমার মাথার ঘিলুও সবটা বেরিয়ে যায়নি….
বুঝতে পারছি
লক ডাউন উঠে গেলেও আমার
হাত পা কাটা ঘিলু বেরনো
বিস্ফারিত নিষ্প্রাণ এই স্বপ্নটুকু
পড়ে থাকবে রেললাইনে,
হাইরোডে,
স্কাইস্ক্যাপারে….
আর
আপনারা তখনও নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে
গান গাইবেন
কবিতা বলবেন
ভ্যাকসিন নেবেন….
অভাবিত
সফল হাসি
নয়ন তারা ফুল হয়ে ফোটে
চাঁদে
জল রঙে আঁকা ছবি
টাঙিয়ে রাখে
নরম রোদ্দুর…
হাওয়া চলাচল করে
ধীরেধীরে
কেঁপে ওঠে দেবদারু পাতা
অভাবিত
এই
আন্দোলনে
কেঁপে উঠি ফের!
Leave a reply