প্রজাতিভিন্নতা বর্ণনির্ভর, আকারনির্ভর
সন্ধিপদ বিশিষ্ট উপাদান নয়, তাই লাল ও কালো
পিঁপড়ের ভালোবাসাবাসি নিষিদ্ধ
পিপীলিকা সংহিতায়
তবু ডিম কি বৈশিষ্টহীন সাদা নয়?
এবং ইতর শারীরবৃত্তিয় ক্রিয়াপদ ও বিশেষণ ছেড়ে
তাদের ভিন্নতাবোধ ব্যক্তিগত বিশেষ্যের
মুখাপেক্ষী হয়েছে সন্দেহে
এছাড়াও পিঁপড়েরা গোষ্ঠীতে বিভক্ত
গোষ্ঠী গড়ে ওঠে প্রসবক্ষম রানিকে কেন্দ্র করে, তাই
রানিহারা গোষ্ঠীর পুরুষেরা চঞ্চল ও শ্রমিকেরা বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে
রানির মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত শ্রমিকদের চোখের জল
ফেলতে দেখেছি
যদিও তাদের স্কুলপাঠ্যে যৌনতা বিষয়ে কোনও রচনা থাকে না
…
সুড়ঙ্গের দুইপ্রান্তে দ্বৈতসত্তা থাকে; ভেতরে বাইরে
বসবাসযোগ্যতা নিয়ে প্রকৃতি নির্ণীত হয়
যেন ভেতরের যৌনতা আর বাইরের শ্রমরেখা দ্বন্দ্বমূলক
এইভাবে সারিবদ্ধ গতিবিনিময় থেকে
শর্করাপ্রীতির মতো অনুশাসনের নীতি, প্রথা
যৌনতা ও শ্রম পৃথক করেছে
রানি, যা স্ত্রীলিঙ্গবাচক
ভালোবাসা নির্ধারণ করে, নিয়ন্ত্রণ করে ক্রীড়া
মাতৃতান্ত্রিক বুঝি? পিঁপড়ের বহুগামীতায়?
পিঁপড়ের খাদ্যনির্ভর সংগ্রাম ও সারিবদ্ধ বাহিনীপ্রতীক
এ সম্পর্কযুক্ত নয়
তবু তাদের সমাজ যৌন ও অযৌন
এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে
যৌনতা ও শ্রম পৃথক করেছে সব পার্থিব পিঁপড়ে
…
শ্রমিকশ্রেণির সমষ্টিচেতনা নিয়ে বহুআলোচনা হয়েছে
যখন চলাচল করে
বাহিনীপ্রধান ও সাধারণের অবিরত সম্পর্কবিন্যাস নিয়ে
আপেক্ষিকগতি সম্পর্কিত কিছু সমস্যার এখনও সমাধান হয়নি
শুধু জানা গেছে, অগ্রের একটি পিঁপড়ের গমনপ্রক্রিয়া
পশ্চাতের পিঁপড়েরা অনুসরণ করে
বস্তুত পিঁপড়েসভ্যতা এখনও অবিশ্বাস আয়ত্ত করেনি
…
ডানা গজানোর যে অপপ্রচার তার বিরুদ্ধে
প্রবাদ তৈরি করেছে পিঁপড়েরা
উড্ডয়ণকামীতা পাপ
উড্ডয়ণকামীতা পাপ
উড্ডয়ণকামীতা পাপ
লেখা আছে তাদের সমস্ত গ্রন্থের ভূমিকায়
নিরক্ষরতা পুরোপুরি দূর হয়নি বলেই
প্রবাদ তৈরি করেছে পিঁপড়েরা
এবং পায়ের সংখ্যা বাড়িয়ে নিয়েছে
হেঁটে যেতে যেতে যেন ক্লান্তি না আসে
…
চিনির দানার সামনে এক মুহূর্ত মাথা নামিয়ে দাঁড়ায় পিঁপড়েরা
ধন্যবাদ জানানোর মতো এক মুহূর্ত, ক্ষমাপ্রার্থনার মতো
তখন তাদের বিরক্ত করতে নেই
ইতিহাসে যতগুলি যুদ্ধ
এই মুহূর্তের পরেই শুরু হয়েছে
ধরে নেওয়া হয়
এমন একটি মুহূর্তে ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি
ধ্বংসেরও ঠিক আগে
তারা একটি চিনির দানার সামনে মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে
…
অথচ বয়ে-আনা চিনির অধিকার প্রথমে রানির, তারপর পুরুষের
জেনেও শ্রমিকেরা একটুও অবশিষ্ট রাখে না
তুলে আনার সময় সেই শূন্যস্থান ভরাট করতে রেখে আসে হাহাকার
ফেরে যখন আর কোনও দুঃখ থাকে না
পদক্ষেপ বিজয়ীর মতো দৃপ্ত
উৎসবে তাদের জায়গা হয় সবার শেষে
রানির নাচ এতদূর থেকে ঠিকঠাক দেখা যায় না
বিভঙ্গ, ইশারা নিজের নিজের মতো কল্পনা করে নেয়
কোনও দুঃখ থাকে না
জানে, অধিকার প্রথমে রানির, তারপর পুরুষের
তারপর যা বাঁচে ভবিষ্যতের জন্য ভাঁড়ার ঘরে ঢুকে যায়
…
রানির অদ্বিতীয় অহংকার মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে
নিম্নপ্রাণীদের কিছু কিছু বোধ স্বভাবত আত্মসাৎ
করেছে মানুষ
রানি, যা স্ত্রীলিঙ্গবাচক
ভালোবাসা নির্ধারণ করে, নিয়ন্ত্রণ করে ক্রীড়া
যেন প্রণয়রেফারি
তাই ধর্ষণ নেই
তাই কোনও শ্রমিক রানির সহবাস কামনা করে না
তবু এখানেও
স্ত্রীর একমাত্র কাজ ডিম পেড়ে যাওয়া
আর ডিম ডিম ডিম ডিম পেড়ে যাওয়া
যতদিন না পরবর্তী স্ত্রীর জন্ম হয় ও তার অদ্বিতীয়তা নষ্ট হয়
রানির এ জীবনপ্রাণালী
মানুষের মধ্যেও কিছু সংক্রামিত হয়েছে
…
বিবাহ অপ্রচলিত তাই পদবি সংকট নেই
শুধু নাম ব্যবহৃত হয়
ইদানিং সংখ্যাধিক্যের কারণে নতুন শিশুর জন্য
নতুন নাম আর পাওয়া যাচ্ছে না
পিঁপড়েরা ভাবছে জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে মানুষের
পরামর্শ নেবে কিনা
…
টুকরো হয় তাদের সংঘ, বৃদ্ধি পায়, একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে অসংখ্য
ছোট ছোট পিঁপড়ের দল পৃথিবীর দখল নেয়
পতঙ্গদের, জন্তুদের কুরে কুরে খেতে থাকে
মানুষের সঙ্গে কিছু সমঝোতা আছে বলে
তাদের কেবল আঙুলে কামড়ে ছেড়ে দেয়
আর তা ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়
পৃথিবীর নাম বদলে হয় কদলীগ্রহ
থোড় আর মোচা নিয়ে রচিত হয় গান
একদিন সব জাগয়ায় যখন থিক থিক করছে পিঁপড়ে
একটি দলের থেকে আরেকটি দলকে আর পৃথক করা যাচ্ছে না
একদিন যখন একটিই জাতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে পিঁপড়েদের
…
এক সাদা পিঁপড়ের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে
যারা কিছু লাল ও কালো পিঁপড়েকে দাস করে রেখেছে
আর রানির মর্যাদাহানির চেষ্টা করছে
বহু আগে কোনও কোনোও গ্রহ ও গ্রহাণুতে তাদের প্রস্তাবিত
অস্তিত্ব নিয়ে বহু তর্ক হয়েছিল
পৃথিবীতে তাদের অনুপ্রবেশপন্থাও তর্কসাপেক্ষ
তবু তাদের শক্তি ও প্রবৃত্তি নিয়ে কোনোও তর্ক নেই
তারা কিছু লাল ও কালো পিঁপড়েকে দাস করে রেখেছে
আর রানির মর্যাদাহানির চেষ্টা করছে
…
লড়াইয়ের মতো ঐক্য আছে পৃথিবীর, ঐক্যের ভেতরে আছে লড়াই
পুরুষদের ভেতরে, অলস, ভোগবাদী, যৌনাতুর পুরুষ পিঁপড়েদের ভেতরে
আছে রাজা হওয়ার প্রতিযোগিতা
আর ওই সুদর্শন সাদার দল আমদানি করেছে সন্দেহ
প্রেমের ধারণা উপহার দিয়েছে রানিকে
শ্রমিকেরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তাদের কাছে ঘেঁষেনি
শ্রমিকেরা খুঁজে বেড়াচ্ছে একটি চিনির দানা
যুদ্ধের আগে যে সামনে দাঁড়াতে হবে
এদিকে সমস্ত চিনির গুদাম জলে ডুবিয়ে দিয়েছে মানুষেরা
…
শ্রমিকেরা খুঁজে বেড়াচ্ছে একটি চিনির দানা
কোনও পবিত্র, অলৌকিক দানা নয়, নিতান্ত সাধারণ একটি
গ্রীষ্মে, বর্ষায়, শীতে পৃথিবীর সমস্ত রান্নাঘরে, খাবার টেবিলের নীচে
সারিবদ্ধ পিঁপড়েরা খুঁজে বেড়াচ্ছে
না পেলে, সেটির সামনে দাঁড়াতে ব্যর্থ হলে
ব্রহ্মাণ্ডও ধ্বংস হতে পারছে না
মানুষেরা চিনির গুদাম জলে ডুবিয়ে দিয়েছে
তাদের শোওয়ার ঘরে, বাথরুমে, বারান্দায় যদি অব্যবহৃত কিছু রয়ে গেছে
সন্ধানে পিল পিল করছে পিঁপড়েরা
অমানুষিক পিপীলিকাশ্রেণি
4 comments on “কবিতা : অনিন্দ্য রায়”
Ananya Pathak
অসামান্য লেখা।
অনিন্দ্য রায়
ধন্যবাদ
ARUNANSHU BHATTACHARYA
জীবনের একঘেয়েমি এই কবিতায় অত্যন্ত স্পষ্ট ৷ অনুভবে, বিন্যাসেও ৷ দারুণভাবে স্পর্শ করে গেল ৷ নতুনরকমও লাগল ৷ অভিনন্দন ৷
ARUNANSHU BHATTACHARYA
জীবনের একঘেয়েমি এই কবিতায় অত্যন্ত স্পষ্ট ৷ অনুভবে, বিন্যাসেও ৷ দারুণভাবে স্পর্শ করে গেল ৷ নতুনরকমও লাগল ৷ অভিনন্দন ৷