Kabitasangraha 1 / Mau Dasgupta

পঞ্চাশের প্রবহমান কবিতা উৎসবে আমরা যারা প্রান্তিক কবিপত্র ‘শতভিষা’র সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিলাম তাদের নিয়ে প্রচলিত একটি সম্ভ্রান্ত বদনাম ছিল এই যে এরা বড্‌ডো বেশী পরিমাণেই একান্নবর্তী পরিবারভুক্ত। অর্থাৎ কিনা এদের একটা তপোবন-কমপ্লেক্স আছে। কথাটা বৃহদংশেই যথার্থ। আমরা তখন এ ওকে প্রত্যহ না দেখলে একফোঁটা বাঁচতে ও লিখতেই পারতাম না। একদিন আমাদের এই যৌথ সংসারের জ্যোৎস্নাপ্লাবিত আঙিনায় যখন মৌ জন্ম নিল তাকে আমাদের আশ্রমদুহিতা বলেই মনে হয়েছিল। সতীর্থ আলোক সরকার বা আমাদের সেই ধারণা সর্বাত্মক ভুল নয়, কেননা শকুন্তলাও তো আয়োজিত আশ্রমিকতার মঙ্গলাচরণ সত্ত্বেও ঝড়-ঝাপ্‌টার দিকেই নিজেকে মেলে ধরেছিল। আমাদের মৌ-ও তাই। আমাদের বাৎসল্যে তার অঙ্কুর লালিত হয়েছিল বলেই যে তাকে আমাদেরই শাশ্বতিক কাব্যানুশাসনের শামিল হতে হবে, সেটা তেমন কোনো কাজের কথা নয়। পিতৃদেব দীপংকর দাশগুপ্তের কাছ থেকে ধ্বনি ও ছন্দের স্বরলিপি আয়ত্ত করে নেওয়ার পরমুহূর্তেই মৌ অস্তিত্বের আগুনের দিকে ছুটে গিয়ে লক্ষ করল বাস-ঝুলন্ত মানুষের দিকে বিমূঢ় এক বালকের হাসি কেমন দ্ব্যর্থক হতে পারে; ‘হস্‌ধাতু থাকলে ভাববাচ্যেও রামই কর্তা’; ঠাহর করতে পারল, কাপালিকও অনায়াসেই কালীকে আত্মসাৎ করে নিতে পারে; দেখল, ‘বাগর্থের মতো সম্পৃক্ত পার্বতী পরমেশ্বর/বিচ্ছিন্ন হচ্ছেন।’ সব মিলিয়ে চিরন্তনকে চ্যালেঞ্জ করতে চাওয়ার গরজ। মৌ-এর এই আকাশপাতাল তছনছ করে দেওয়ার দৃপ্ত আস্পর্ধা কবিতারই অনপনেয় পারমিতা। এই দুঃসাহস বয়ঃসন্ধিরই সম্পদ। মৌ-এর কবিতা এই বয়ঃসন্ধিক্ষণের আলপনা। এক কথায় অনতিউনিশ কুন্দলতা। তার নিত্যশুভার্থী তথা নিবিড় অনভিভাবকের জায়গা থেকে এই সুযোগে তার কবিতার ব্যাপক সমাদর আমি কামনা করি।

অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত