স্বপ্নের মৃত্যু
পিচ-মোড়া অজগর। দেহ শুরু হয়েছিল বহু আগে
এবারে তার মুখ আমাদের উগরে দিয়েছে ওয়াচ-টাওয়ারে
দু-একটি পরিত্যক্ত চার-চাকা। সবুজের লুকানো শিকড়
যেন রাক্ষসের শুঁড়। খেয়ে ফেলছে ধাতুর শরীর
যোনি-চিহ্ন আঁকা একটি অচেনা গাছ
বনের ভিতর নড়ে ওঠা হাতির শরীর
ওয়াচ-টাওয়ারের কাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে ময়ূর
গত বুধবার চিতা দেখা গেছে
তার আগের সপ্তাহে বাইসন
তারও আগে বুনো-খরগোশ, এক
পাইথন ঝুলে ছিল গাছে
কিন্তু আমরা কয়েকটি প্রজাপতি গন্ডার দেখতে এসেছি
ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেছিলাম
তাকিয়ে ছিলাম দূর ঘাসবনের দিকে। অধৈর্য হয়ে উঠেছিল গাইড
বলেছিল – ওই যে একখানা বক, ঘাসবনে
ও আসলে বসে আছে গন্ডারের পিঠে, খুঁটে খুঁটে পোকা খাচ্ছে
ফিরে আসছি। স্বপ্ন-গন্ডারের সঙ্গে দেখা হয়নি আমাদের
টাটা-সুমোর ভেতর রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে নির্জন লেভেল-ক্রসিঙে
তার মৃত্যু ঘটেছিল। সে হয়ে উঠেছিল
ঘাসবনে শরীর লুকিয়ে রাখা… নামানো খড়্গ এক প্রাণী
যার পিঠে বসে থাকে দুধ-শাদা বক
ইনডোর গলফ
একটি গোলকে আরেকটি গোলক প্রবেশ করানো অন্ধের সঙ্গে দাবা খেলবার মতো ভারী
মানুষ বিষণ্নতা থেকে আবিষ্কার করেছিল গলফ
একজন মানুষ তার চরম বিষণ্নতা থেকে আবিষ্কার করেছিল ইনডোর-গলফ
পৃথিবীতে প্রথম যে মানুষটি ইনডোর-গলফ খেলেছিল
তার নাম জানা যায় না। শুধু জানা যায় শেষ মদের বিন্দুটি রক্তে মিশিয়ে
সে এসে দাঁড়িয়েছিল হলুদ-বাল্বের নীচে এক ফাঁকা করিডোরে
শোয়ানো গেলাস আর ছাতার পুরানো হাতলের মাঝখানে বমি করেছিল
বমির ভেতর ফুটে উঠেছিল ছিটছিটে রক্তের দাগ
তারপর সে খুঁজে এনেছিল ফ্যাকাসে একটি ন্যাপথালিন-বল
করিডোরে গড়াতে গড়াতে সে বল ঢুকে গিয়েছিল কাচের গেলাসে
নিশানা হারিয়ে সে বল চোখের মণির মতো পড়েছিল গেলাসের পাশে
ক্রমশ ন্যাপথালিন-গন্ধে ভরে উঠেছিল ফাঁকা করিডোর
বিষণ্নতম মানুষটি মধ্যরাত্রে আবিষ্কার করে
ন্যাপথালিন-বল বলে আর কিছু নেই। তারপর
সারারাত এক ভারী গন্ধকে ছাতার পুরানো হাতল দিয়ে
গড়িয়ে দিচ্ছিল ফাঁকা গেলাসের দিকে, আর
গন্ধের থেকে সে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছে এক ফ্যাকাসে করুণ ন্যাপথালিন-বল
বীজ
দিগন্তের কাছে যেখানে পাখির দল মুখে রক্ত তুলে রক্ত ফেলে আসে
সেখানে অবাক ছোটঘরে সূর্য ঢুকে পড়ে
সূর্য ছাতু মেখে খায়, তার বউ কাঁসার থালার পাশে রাখে জলের গেলাস
এক একটা দলা যেন এক একটা মহাদেশ… পাণ্ডিম অন্নপূর্ণা-চূড়া
নীচে মাঠ, আমাদের ঘরবাড়ি
ধীরে ধীরে অন্ধকার নামে। সাহু-বনিকের ফাঁকা খেত
তিনটে কুমড়ো-দানা সাতটা সিমের বীজ বছর পুরানো
আহা কে তুমি তিলোত্তমা সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে
পাথুর মাটিতে বীজ পুঁতে ফিরে যাচ্ছ ত্রস্ত পায়ে হেঁটে
অন্ধকার সূর্যের গ্রাসে ফুটে ওঠে দু-একটি স্বর্ণাভ অন্নময় দানা
7 comments on “কবিতা : পার্থজিৎ চন্দ”
রণজিৎ অধিকারী
অসামান্য তিনটি কবিতা পড়লাম। কবিকে নমস্কার জানাই।
Shila Biswas
খুব ভালো লাগলো
Shatanik Roy
অপূর্ব কবিতা পড়লাম! আহা!
Malay pahari
প্রিয় কবি, দুর্দান্ত কয়েকটি কবিতা।কয়েকদিন আগেই একটা দুর্দান্ত গল্প পড়েছি।
Shyamashri Ray Karmakar
অসামান্। বিশেষ করে ইনডোর গল্ফের বিষণ্ণ একাকীত্ব থেকে বেরোতে পারলাম না
সৌমাভ
ইনডোর গলফ কবিতাটি ভুলব না
জা তি স্ম র
অপূর্ব অপূর্ব